সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনি আরেকটি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান ‘আকাশ নীল’। যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করে ইতোমধ্যেই গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ৯ হাজার গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনি ধানমন্ডিতে কেনেন তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট। ব্যবহার করতেন ৬০ লাখ টাকার গাড়ি। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন দিতেন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান।
এর আগে রোববার (২০ মার্চ) রাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গ্রাহকদের কাছে কোম্পানিটির দেনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। টাকা ও পণ্য দিতে না পেরে, গেল নভেম্বর থেকে অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা ছিল মশিউর ও রনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মশিউর ও রনি ২০১৯ সালে ‘আকাশ নীল’ নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খোলেন। এ প্রতিষ্ঠানের নামে তারা ট্রেড লাইসেন্সও করেন। প্রথমে শাক-সবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। করোনায় সুবিধা করতে না পেরে শুরু করেন ভিন্ন ব্যবসা। কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেন। ব্যবসার ধরন পাল্টে শুরু করেন ই-কমার্স ব্যবসা। ডিসকাউন্ট অফারে মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু করেন। তিন দফায় তিনি ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিতে শুরু করলে অফিস গুটিয়ে নেন তারা। নিজেদের ব্যবহৃত ফোন বন্ধ রাখেন। একপর্যায়ে দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিট নেন এমডি মশিউর।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রথম ক্যাম্পেইন শুরু করেন গত মে মাসে। সে সময় ৩০ শতাংশ ছাড়ে দুই মাসের মধ্যে ডেলিভারির আশ্বাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান।
এর পর গত বছরের জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির নিশ্চয়তায় মোটরসাইকেল বিক্রির অফার দেন। অর্ডার পান এক হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে মোটরসাইকেলের তৃতীয় ক্যাম্পেইনে ২৩ শতাংশ ছাড়ে ২৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের আশ্বাসে ৯ হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি তারা লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, গৃহস্থালির অন্যান্য পণ্য বিক্রি নিয়েও অফার দেন।
খন্দকার মঈন বলেন, গ্রাহকদের এসব টাকা সরাসরি মশিউরের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো। অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানকৃত অর্থ নিয়ে তারা প্রতারণা করতো।
র্যাব জানায়, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘আকাশনীল’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকসসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গেল ১৮ মার্চ রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীরা। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. মশিউর রহমান ও তার সহযোগী রনিকে রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রাহকদের অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন ও সাম্প্রতিক সময়ে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করেছিল এই প্রতারক চক্র।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রাহকদের টাকা সরাসরি মশিউরের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো। অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানকৃত অর্থ নিয়ে তারা প্রতারণা করত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আকাশ নীলে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। যাদের মাসিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হতো। গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। রয়েছে প্রিয়াশ ও সিএইচআর মডেলের দুটি দামি গাড়ি। এ ছাড়া কোম্পানির চারটি টাটা পিকআপ রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি মশিউর দুবাই পালানোর জন্য ভিসা ও বিমান টিকিট ক্রয় করেন। তার আগেই গ্রেপ্তার হন মশিউর ও তার সহযোগী রনি।