নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি মানুষ যাতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়, নিজেদের জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলে সেভাবে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে।
গতকাল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের চলচ্চিত্রে কেবল বিনোদন নয়, এর সঙ্গে সমাজ সংস্কার, শিক্ষা ও দেশপ্রেমের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে যে একটা সুপ্ত প্রতিভা আছে তাকে বের করে নিয়ে এসে একটা বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এটাই কিন্তু চলচ্চিত্র করতে পারে। কাজেই সে কাজটাই আমাদের করতে হবে বেশি করে। একদিকে শুধু বিনোদন না, বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজ সংস্কার, মানুষকে শিক্ষা দেওয়া বা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা শিল্পী, কলাকুশলী যারাই আছেন তারা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, আমাদের গণমানুষের যে আত্মত্যাগ এবং আমাদের এগিয়ে চলার পথ সে পথটা যেন মানুষের কাছে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন হয়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ যেন সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বা নতুন প্রজন্ম তারা যেন নিজেদের জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে সেইভাবেই আপনারা শিল্পগুলোকে তৈরি করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন সেটাই আমি চাচ্ছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে বা সমাজের অনেক অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা দূর করতে এ চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। চলচ্চিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র আসলে আমাদের একটা জীবনেরই চিত্র, জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি বা আমরা যদি ইতিহাসও ঘেঁটে দেখি, আসলে চলচ্চিত্র যেমন আমাদের সমাজকে সংস্কার করতে পারে, সমাজ সংস্কারে এ চলচ্চিত্র বিরাট অবদান রাখতে পারে। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় পুরস্কার প্রদান। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। তবে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাওয়া বর্ষীয়ান অভিনেত্রী আনোয়ারা সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর পক্ষে এটি গ্রহণ করেন তাঁর মেয়ে অভিনেত্রী মুক্তি। আনোয়ারাকে মঞ্চে না দেখে কারণ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। অভিনেত্রী অসুস্থ জানতে পেরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আনোয়ারা আসতে পারেননি। আমি জানতাম না যে আনোয়ারা অসুস্থ। শুনে খুব দুঃখ পেলাম। তাঁর রোগমুক্তি কামনা করি। এ সময় কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারার যে কোনো সহযোগিতায় পাশে থাকার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিনেমা মানুষের মনে দাগ কাটে, জীবনদর্শন এটাই প্রকাশ পায় বা সময়কালীন বিভিন্ন ইতিহাসের ধারাটা জানা যায়। এ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই অনেক বার্তা পৌঁছে যায়। তা ছাড়া ইতিহাসের বার্তাবাহক হিসেবেও কিন্তু চলচ্চিত্র, সেটা ইতিহাসকে ধরে রাখে। অনেক অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়। অনেক হারিয়ে যাওয়া ঘটনা সামনে নিয়ে আসে এবং যা জীবনের সঙ্গে মিশে যায়। চলচ্চিত্রকে আধুনিকায়নে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আমাদের সিনেমা শিল্পটা অনেকটা অ্যানালগ পদ্ধতিতেই থেকে গিয়েছিল। সেটাকে আমি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করতে চাই। তিনি বলেন, আমি আগেও আমাদের যারা মালিক তাদের সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, মাঝখানে ভাটা পড়ে যাওয়ায় অনেকেরই সে উদ্যম ছিল না। এখন আমরা ১ হাজার কোটি টাকার একটা আলাদা ফান্ড তৈরি করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের একেবারে জেলা-উপজেলা সব জায়গায় এ সিনেমা বা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলচ্চিত্র দেখানো যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসি গড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প এগিয়ে যাক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। যে তরুণরা সিনেমা শিল্পে এগিয়ে এসেছেন আমি বিশেষভাবে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এরাই তো ভবিষ্যৎ। শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের জন্য উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক শিল্পী বৃদ্ধকালে করুণ অবস্থায় জীবন যাপন করেন। আমরা শিল্পী, কলাকুশলীদের জন্য ফান্ড ট্রাস্ট করে দিয়েছি। যাতে আমাদের কোনো শিল্পী কষ্ট না পান। চলচ্চিত্রের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র আমাদের জীবনের চিত্র। জীবনের প্রতিচ্ছবি। চলচ্চিত্র সমাজ সংস্কার করতে পারে। এর মাধ্যমে অনেক বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়। ইতিহাসের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে চলচ্চিত্র।
এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন যাঁরা : এবার মোট ২৭ বিভাগে ৩০টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সিনেমা হয়েছে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘গোর’। এর মধ্যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ থেকে চিত্রনায়ক সিয়াম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও ‘গোর’ থেকে চিত্রনায়িকা দীপান্বিতা মার্টিন হয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। সর্বোচ্চ ১১টি পুরস্কার পেয়েছে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘গোর’। আর একই সিনেমার জন্য ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ চারটি পুরস্কার পেলেন গাজী রাকায়েত।
সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার তিন দেশের মধ্যে নতুন ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার মাধ্যমে কৌশলগত স্তরে সম্পর্ক জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রগুলোতে কৌশলগত যোগাযোগের লক্ষ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে উভয়পক্ষেই সহযোগিতার নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সকালে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এস্পেন রিক্টার-ভেনসেন, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসন ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।