হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি

হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি

রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) গত মঙ্গলবারের পর ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও হাজারের নিচে নামেনি। ঢাকার বাইরে অনেক হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। ঢাকায় বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও বাইরে শিশু বেশি। একই সঙ্গে হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে।

 

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে গত শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআরবিতে নতুন করে এক হাজার ১৩৮ রোগী ভর্তি হয়। প্রতি ঘণ্টার হিসাবে যা ৪৭ জন। আবার গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টায় ভর্তি হয় আরো ৮৬৭ রোগী। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হয় ৫০ জনের বেশি। এর আগে গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড এক হাজার ২৭২ রোগী ভর্তি হয়।

আইসিডিডিআরবির তথ্য মতে, ২০০৭ সালে এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। এরপর ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৫৭ রোগী ভর্তি হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র ম্যানেজার, কমিউনিকেশন এ কে এম তারিফুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরো কিছুদিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি : গরম শুরুর পর থেকে বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। এবার রাজধানীতে যে হারে বাড়ছে, এই অঞ্চলে তেমন ব্যাপকতা পায়নি। তবে যেভাবে বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি মার্চের ২৬ দিনে বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮১০ জন। ১ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯১ জনে।

ভোলা : ভোলায় গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সদর হাসপাতালে শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, একজন নার্স একাই ২০ রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। রোগীদের মধ্যে শিশু বেশি। শয্যাসংকটের কারণে বারান্দার মেঝেতেও কয়েক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

টাঙ্গাইল : গতবারের তুলনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। শিশু ও নারী রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। রোগীদের একাংশ মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স সালমা ইয়াসমিন বলেন, রোগীদের মধ্যে শিশুই বেশি। গত ২৩ মার্চ ৫২, ২৪ মার্চ ৫০ ও ২৫ মার্চ ৪৩ রোগী ভর্তি হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে দুই দিনের ব্যবধানে আড়াই গুণ রোগী বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে ডায়রিয়া ওয়ার্ড এবং এর বাইরে মেঝেতে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০৪ রোগী ভর্তি ছিল। গত ২৪ মার্চ ছিল ৪২ রোগী। পরদিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৮৫ জনে।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে গত শুক্র ও শনিবার দুই দিনে ৩৪ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেশির ভাগই শিশু। চিকিৎসকের দাবি, অন্যান্য জেলার তুলনায় জয়পুরহাটে ডায়রিয়া রোগ এখনো স্বাভাবিক। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ রোগী ভর্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

কুড়িগ্রাম : উলিপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই শিশু। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ২০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মোরসালিন নামের আট মাসের এক শিশু ও গত ৩ মার্চ বোরহান মিয়া নামের ১৫ মাস বয়সী আরেক শিশুর মৃত্যু হয়।

বাগেরহাট : শরণখোলায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ২২ রোগী ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ১৭ জন শিশু। বাকি পাঁচজন নারী।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ববি শাহা বলেন, বর্তমানে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর চাপ বেশি। হাসপাতালে যে পরিমাণ শয্যা আছে তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ।

হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস এম ফয়সাল আহমেদ বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। এ ছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এ কারণে দূষিত পানি পান করে মা ও শিশু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়।

বরগুনা : জেলার বেশির ভাগ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় কোথাও কোথাও রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, জেলায় গত জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৯৭৮ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

গতকাল দুপুরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা আছে ১৩টি, আর রোগী ভর্তি ২৬ জন। অর্ধেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে।

স্বাস্থ্য