ময়দা ও রঙে তৈরি হচ্ছিল শ্বাসকষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ

ময়দা ও রঙে তৈরি হচ্ছিল শ্বাসকষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ

ঠাণ্ডা-শ্বাসকষ্ট আর গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় সম্প্রতি সর্বাধিক বিক্রীত ওষুধ মোনাস-১০ আর প্যানটোনিক্স-২০। এই চাহিদাকে পুঁজি করে একটি চক্র এই দুই ওষুধের সাড়ে ১০ লাখ ভুয়া ট্যাবলেট তৈরি করে। আটা-ময়দা আর রঙের মিশ্রণে তৈরি এসব নকল ওষুধ রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে আসার পর ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। বেশি লাভের আশায় জেনে-বুঝেই এই নকল ওষুধ কিনে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ফার্মেসি মালিক।

সম্প্রতি নকল ওষুধের দুটি বিশাল চালানের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছিল মিটফোর্ড মার্কেটে। কিন্তু গত বুধবার রাতে রাজধানীর চকবাজারের মদিনা চাঁন সরদার কোল্ড স্টোরেজের এজেআর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি (কুরিয়ার সার্ভিস) থেকে নকল ওষুধের চালানটি আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় নকল ওষুধের পাইকারি বিক্রেতা আলী আক্কাস শেখ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যে ফকিরাপুল এলাকা থেকে ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল নামে ওই নকল ওষুধ তৈরি কারখানার মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ। তাদের তথ্যে রাজধানীর চকবাজার, ফকিরাপুল ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে- ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ পিস নকল প্যানটোনিক্স-২০ ট্যাবলেট ও ১৮ হাজার পিস নকল মোনাস-১০ ট্যাবলেট, নকল ট্যাবলেট তৈরির পূর্ণাঙ্গ ডায়াস সেট এবং

প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ট্যাবলেট প্রিন্ট করা ৩৪ কেজি ফয়েল পেপার জব্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তদন্তের বরাত দিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল নামের আয়ুর্বেদি ওষুধ তৈরির কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে নকল মোনাস-১০ ও প্যানটেনিক্স-২০ ট্যাবলেট। ঠাÐা-শ্বাসকষ্ট আর গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত এ ওষুধ দুটি তৈরি করা হচ্ছিল আটা-ময়দা আর রঙ ব্যবহার করে। এরপর সেসব নকল ওষুধ আনা হতো রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ মার্কেটে। সেখানে ব্যবসায়ীদের হাত ধরে কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসে ছড়িয়ে দেওয়া হতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গত বুধবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে নকল ওষুধের চালানটি জব্দ করা ছাড়াও চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে দর্শনায় গিয়াস উদ্দিনের কারখানায় চালানো হয় অভিযান। যেখানে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির আড়ালে এসব বহুল প্রচলিত ওষুধ হুবহু নকল করে তৈরি করা হচ্ছিল।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, বাজারে বহুল প্রচলিত এই দুই প্রকারের ভুয়া ওষুধ তৈরি করে চক্রটি ৩-৪ বছর ধরে বিপণন করছিল। ১৬ টাকার মোনাস-১০ ও ৬-৭ টাকার প্যানটোনিক্স তারা বিক্রি করত ২ টাকায়। জব্দ ওষুধের গায়ে যথাক্রমে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সাভার ম্যানুফ্যাকচার বাই দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ধুলিভিতা, ধামরাই, ঢাকা বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। এসব নকল ওষুধ তৈরিতে আটা-ময়দা ও রঙ ব্যবহার করা হতো। এমনকি ডাই বা স্টেরয়েড ব্যবহৃত হতে পারে। নন-ফার্মাসিউটিক্যাল এসব ওষুধ সেবনে কোনো উপকার তো হয়ই না, বরং কিডনি-লিভার, হৃদ্যন্ত্র বা শ্বাসতন্ত্র মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

যারা ওষুধ বিক্রি করেন তাদের নৈতিক দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, যারা কিনছে, তাদেরও কেনার সময় আরও সতর্ক হয়ে ভালোভাবে দেখে ওষুধ কিনতে হবে। নকল ওষুধ তৈরি বড় ধরনের একটি ক্রাইম। দয়া করে এসব কেউ বানাবেন না। বানালে বিপদে পড়ে যাবেন। যারাই নকল ওষুধ তৈরির চেষ্টা করবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা ভেজালবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করছি। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

facebook sharing buttontwitter sharing button

অপরাধ