রাজধানীতে এডিসের পর বেড়েছে কিউলেক্স মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। ঘরে-বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার প্রভাব। মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। গত বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এসময় রাজধানী ছিল এডিস মশার দখলে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল ভয়াবহ। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ফলে নড়েচড়ে বসে সিটি করপোরেশন।
দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন ঢাকার দুই মেয়র। এই সময়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বড় আকারে মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করে। এরপর সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এ কার্যক্রমে ঢিলেঢালা ভাব দেখা দেয়। এই সুযোগে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ফলে এডিস মশার প্রকোপ কমার পর নভেম্বর থেকে শুকনো মৌসুমে দেখা দিয়েছে কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব।
সিটি করপেরেশন সূত্রে যানা যায়, চলতি অর্থবছরে দুই সিটিতে মশা নিধন কর্মসূচি হাতে নিয়ে বাড়ানো হয়েছিল বাজেটও। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে এবারে ৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবারের বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণ খাতে ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। নগরবাসীর অভিযোগ, বাজেট বাড়লেও মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা হলেও তা সঠিকভাবে বান্তবায়ন হয় না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ শুরু করেছে তা এখন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। যে কারণে নভেম্বরে কিউলেক্সের উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও এখন তা বেড়েছে, তখনই যদি এটি নিয়ন্ত্র করা যেত তাহলে এটা এখন আর বাড়তে পারতো না।
কিউলেক্স মশা মূলত ডোবা, নালা, ড্রেন, পুকুর ঝিল ইত্যাদী স্থানে বংশ বিস্তার করে থাকে শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ শীতের শুরুতে এ মশার উৎপাত বেড়ে যায়। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস মূলত কিউলেক্স মশার মৌসুম বলা যেতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডোবা ও খালগুলো কচুরিপানায় ভরে আছে। ড্রেনগুলোও ঠিক মতো পরিস্কার করা হচ্ছেনা। ফলে সহজেই বংশ বিস্তার করছে কিউলেক্স মশা। এছাড়া সকাল বিকাল ঠিক মত মশার ওষুধ না ছিটানোর কারণে মশার উৎপাত বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ত্রী কিউলেক্স মশার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ফাইলেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এতে গোদ নামে পরিচিত একটি রোগ হতে পারে। এ রোগের প্রভাবে হাত পা ফুলে যায় ও বারবার জ্বর হয়। যদিও বাংলাদেশে গোদ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। কারণ কিউলেক্স মশা প্রায় ১০ হাজার বার কামড়ালে এই রোগ হয়। এর সঙ্গে রোগী কৃমি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উৎপাত। এসব এলাকায় দিনের বেলাতেও মশায় কামড়ায় সন্ধার পরে উৎপাত আরো বেড়ে যায়। কোথাও একটু দাড়ানো যায় না। মাঝে মাঝে মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটিয়ে যায়। কিন্তু তাতে মশা মরে না। মহাখালির বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, এ এলাকায় অনেকদিন মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। মশার উৎপাতে ছেলে মেয়েরা সন্ধার পর পড়তে পারেনা। দিনের বেলাও মশায় কামড়ায় নিজেরাই এখন স্প্রে করে নিয়ন্ত্রন করছি। এবিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন মানবজমিনকে বলেন, গত মাসের চেয়ে এ মাসে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। তবে সব অভিযোগ সত্যি নয় প্রত্যেকটা জোনে আমাদের কর্মীরা মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে, তবে হ্যাঁ আমাদের কর্মীদেরও কিছু দোষ ত্রুটি রয়েছে। কোন এলাকায় মশক কর্মী না গেলে আমাদের জানালে আমি লোক পাঠিয়ে দিব।
এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি নির্বাচন থেকে মশার প্রকোপ ব্যাপক বেড়েছে। হাজারীবাগের এক বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় মশার উৎপাত। কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। পান্থপথের বাসিন্দা শাহেদ বলেন, মশক নিধনে যে ওষুধ দেয়া হয় তাতে মশা নিধন হয় কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যদি ওষুধে কাজ হতো তবে এতো ওষুধ দেয়ার পড়েও মশাতো কমে না কেন? লোক দেখানো ওষুধ দিলে হবে না, কার্যকর ওষুধ দিতে হবে। কিউলেক্স মশার উপদ্রব সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ৪২৯ জন কর্মী প্রতিদিন মাঠে কাজ করে। এই মৌসুমে বৃষ্টি কম থাকে এবং গাছে মুকুল আসে তাই মশার খাবারের সংকট হয় না, ফলে মশার উপদ্রব্য বেড়ে যায়। কিউলেক্স মসার প্রজনন স্থল হলো জলাশয়, ড্রেন, খাল, বিল, নালা ইত্যাদী। এছাড়া ময়লা,অপরিচ্ছন্ন এলাকায় এসব মশা বেশি জন্মায়। আমরা ড্রেনগুলো পরিস্কার করছি এবং ড্রেনগুলোতে ‘ম্যালেরিয়া ওয়েল বি’ নামের একটি নতুন ওষুধ ছিটাচ্ছি, আমাদের ড্রেনগুলো হলো কাভার ড্রেন তাই ওষুধ দিতে সমস্যা হয়। সকাল বিকাল আমাদের মশক নিধন কর্মীরা মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে।