নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ডিবি।
জাহিদুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাসুমের সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয় সোমবার। এ দিন ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।
মাসুমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি বলছে, ঘটনার দিন মোটরসাইকেলে করে শাহজাহানপুরে গিয়ে জাহিদুলকে গুলি করেন মাসুম। এ সময় মোটরসাইকেল চালান তাঁর বন্ধু মোল্লা শামীম। তিনিও গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছে ডিবি।
ডিবির কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় মাসুম পরিবার থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন। এসব মামলা নিয়ে হতাশা ছিল তাঁর। জাহিদুলকে হত্যা করতে পারলে সেসব মামলা থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন মাসুম।
হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে মাসুম ডিবিকে বলেছেন, একজন পরিচিত লোক তাঁকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল দিয়েছিলেন। ঘটনার পর একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ওই ব্যক্তির কাছে জমা দেন।
গত শুক্রবার জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়। গত রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি। আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরফান উল্লাহকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অস্ত্র মামলায় এক দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার আরফানকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত নতুন করে তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার চার আসামির বিষয়ে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জানায়, অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ, মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজে ভর্তি-বাণিজ্য, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জাহিদুলকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ২০০৬ সালে এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার আসামিরাও এই খুনের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে র্যাব। জাহিদুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সুমন শিকদার মুসা। যিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ–প্রকাশের সহযোগী। তিনি বোঁচা বাবু হত্যা মামলারও আসামি।
গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ব্যস্ত সড়কে গুলি করে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। তখন এলোপাতাড়ি গুলিতে যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।