চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এখনও কয়েক মাস বাকি থাকলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কানাঘোষা ও কিছুটা দৌড়ঝাঁপও। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন নাকি নতুন কেউ এই পদে বসবেন। আর নতুন কেউ হলে তার বয়স বা কী হবে? ষাটে ছুঁই ছুঁই নাকি তার ঊর্ধ্বে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে একই আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনা চলছে।
পদপ্রত্যাশীরাও কোনোভাবেই মুখ খুলছেন না। তবে বর্তমানে তারা বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন, বর্ধিতসভায় আর সহযোগী সংগঠনের সমস্যা সমাধানের কাজটি করছেন। সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় কাউন্সিলকে টার্গেট করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কেন্দ্রের কাউন্সিলের আগে দলের জেলা, উপজেলা, মহানগর, ওয়ার্ড ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিদের্শ দিয়েছেন হাইকমান্ড। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের জাতীয় সম্মেলন আগামী ডিসেম্বর মাসে হওয়ার কথা। তিন বছর পর পর আমাদের সম্মেলন হয়, সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে আমাদের নির্ধারিত সময়। সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রম চলমান। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সময়ে সারা বাংলাদেশে সদস্য সংগ্রহ শুরু করতে হবে এবং সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমকে আমি জোরদার কারার জন্য সকল শাখাকে অনুরোধ করছি। একই সঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম, বিভাগ, মহানগর, জেলার নেতাদেরকে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আবারও স্বপদে চান কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলরদের সমর্থনে আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনিই হচ্ছেনÑএমনটাই জানান দলের সিনিয়র নেতারা। তবে সভাপতির পরের পদ সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে এবার বেশ আলোচনা হচ্ছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? কোন যোগ্যতায় এবার সাধারণ সম্পাদক বাছাই করা হবে। পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম নেতাকর্মীদের মুখে বলাবলি করা হচ্ছে। এমনকি অনেকের নাম আলোচনায় রয়েছে। বিশেষ করে এসব নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আলোচনায় রয়েছেন। তবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তাকেও আবার স্বপদে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বেশ কয়েকজন নেতা।
এদিকে এবারের সম্মেলনের মূল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে টার্গেট করে দলকে গোছানোর তাগিদ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য পদপ্রত্যাশীদের মধ্য হতে এক প্রস্তাব করেন এবং আরেক তা সমর্থনের মধ্য দিয়ে দুইটি পদে ঘোষণা করা হয়।
তৃণমূলের নেতাকর্মীর মতে, এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যবারের চেয়ে বেশি। কারণ নির্বাচনী বছর। দলের সাধারণ সম্পাদকই দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তাই এবারের সম্মেলন নেতা বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা ভিন্ন রকম হতে পারে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে তিনটি প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারেন দলের হাইকমান্ড ও কাউন্সিলরা। ত্যাগী ও যোগ্য, তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য এবং সৎ ও সাহসী। এই তিনটি গুণ সম্পন্নকারীই দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হতে পারেন। সামনে নির্বাচন তাই সাহসী নেতার খুবই প্রয়োজন। এমন ব্যক্তিকে দেয়া যাবে না তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে গণতন্ত্র পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হবে না। তবে এবার নেতৃত্বে বাছাইয়ে একটু ভিন্নভাবে হতে পারে। দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকেও সাধারণ সম্পাদক করা সম্ভব। কেবল যুগ্ম সম্পাদক কিংবা সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে সাধারণ সম্পাদক বানাতে হবে কেন? যোগ্যতা থাকলেও সাংগঠনিক, সম্পাদকমণ্ডলীর কিংবা কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে থেকেও এই পদে বসানো যায়। দলের অনেকেই কিন্তু এই পদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। ওই সিনিয়র নেতার মতে, আমিই সব বোঝাতে পারি তা কিন্তু না। দলের অনেকেই যোগ্য। তবে কে যে যোগ্য ব্যক্তি তা কিন্তু কাউন্সিলররা জানেন। এখনও বলা যাবে না কে হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। কাউন্সিলের সময় যতই এগিয়ে আসবে হিসাব ততই পরিষ্কার হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক সময় রয়েছে, সাংগঠনে যে অসম্পন্ন কাজ রয়েছে তা এই যথেষ্ট সময়ে মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। আমরা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়নের কাজ শুরু করেছি। করোনার কারণে তৃণমূলে সম্মেলন থমকে থাকলেও এখন দ্রুতগতিতেই হচ্ছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সাহসী ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তুলে দেয়া হচ্ছে। যাতে দলের প্রতি জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। জাতীয় কাউন্সিল সফল করার মতো এখন অনেক সময় আছে।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়েছে। করোনার কারণে গত বছর অনেক স্থানে সম্মেলন করা যায়নি। তবে এ বছর তা শেষ করবেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সেই প্রস্তুতি নিয়েই সামনে এগুনো হচ্ছে। জাতীয় সম্মেলনের আগেই অন্যান্য সম্মেলন শেষ করা হবে।