বান্দরবানে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে অভাবনীয় অগ্রগতি

বান্দরবানে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে অভাবনীয় অগ্রগতি

জেলায় বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধা বেড়েছে। গত ১০বছরে বিদ্যুতের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০। সেই সাথে মাসিক প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। থানচি উপজেলা সদর, বাইশারী এবং সরই ইউনিয়নে স্বাধীনতার পর এ প্রথম বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এলো শত শত পরিবার, বিপুল সংখ্যক শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বান্দরবান বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী চিংহলা মারমা জেলায় সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে জানিয়েছেন, গত ২০০৯ সাল থেকে চলতি সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছরে গ্রামীণ পর্যায়ে থানচি উপজেলা সদর, লামা উপজেলার সরই এবং নাইক্ষংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন সদরের কয়েক হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এ তিনটি অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার পর এ প্রথমবারে সরকারি বিদ্যুৎ সুবিধা পেলেন।
গত ১০ বছরে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রুমা উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার বিদ্যুত গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি তথ্য প্রকাশ করে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে লামা উপজেলায় ৩৮ কিমি এবং থানচি উপজেরলয় ৩৫ কিমি দীর্ঘ ৩৩ কেভি লাইন স্থাপিত হয়েছে। তাছাড়াও থানচি উপজেলায় ১৭ কিমিসহ লামা,নাইক্ষংছড়ি,রুমা,রোয়াংছড়ি এবং বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯২ কিমি ১১ কেভি এবং ১১৯ কিমি স্থানীয় বিদ্যুত লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪টি বিদ্যুত উপকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ৪টি উপকেন্দ্রসহ বিদ্যুত লাইন স্থাপনে সাকুল্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ২ লাখ টাকা। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় সোলার প্যানেলসহ স্থানীয়ভাবে বিদ্যুত সরবরাহ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, জেলায় বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা-৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট এবং ২০০৯ সালে চাহিদা ছিল ৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত। বিদ্যুতের গ্রাহক সংখা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় ১০ বছরের মধ্যে মাসিক রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, বিদ্যুত বিল আদায়ের পরিমাণ গড়ে ৯৫ শতাংশ।
জেলার লামা উপজেলার সরই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালে সরই ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুত লাইন স্থাপিত হয়েছে। ইউনিয়ন সদরের ক্যাজুপাড়া বাজারসহ ৫ কিমি এলাকায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। কর্তৃপক্ষ নতুন করে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান সাপেক্ষে আরও প্রায় ৭০০ গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধা পাবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বিদ্যুত সংযোগ সম্প্রসারণের জন্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের পরামর্শে রাঙ্গামাটিস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুত উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের সাথে সম্প্রতি সাক্ষাতও করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
নাইক্ষংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী এবং সাংবাদিক মো. আবদুল হামিদ জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর এ প্রথমবারে ২০১৭ সালে বাইশারী ইউনিয়ন সদর পল্লী বিদ্যুতের আওতায় এলো। ইতিমধ্যেই বিদ্যুত গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১২শ’। তবে ক্রমশ বিদ্যুত গ্রাহক আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
থানচি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর এ প্রথমবারে বিদ্যুত লাইন স্থাপতি হয়েছে চিম্বুক থেকে থানচি উপজেলা সদর এলাকা পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০০ গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে এবং আগামীতে গ্রাহক সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুত লাইন স্থাপনের কারণে উপজেলা হাসপাতাল, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, থানচি কলেজ, থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত সংযোগ পেয়েছে। তাছাড়াও বেশকটি রাইচ মিল, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষি খামার, সেচযন্ত্র এবং কুটির শিল্প প্রকল্পগুলো বিদ্যুতের আওতায় আসছে ক্রমেই।
সরই ইউনিয়নের ক্যাজু পাড়ার বাজার এলাকার মৎস্যখামারী আবদুর রহিম এবং একই এলাকার বিদূুত গ্রাহক মো. রফিক বলেন, তারা এ প্রথমবাবে সরকারি বিদ্যুত সরবরাহ পাওয়ায় তাদের স্বপ্নœ পূরণ হয়েছে। তারা বিদ্যুত ব্যবহারে আধুনিক যুগের ছোঁয়া পাচ্ছেন। তারা জানান, বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বহুক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।

তথ্য প্রুযুক্তি