কুমিল্লার চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের গুলিতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় রেদোয়ান আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রি কলেজের সামনে এই গুলির ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানোর পর তিনি থানায় আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গতকাল চান্দিনায় একই স্থানে এলডিপি ও ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নিয়ে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা হলে তিনি নিজের শটগান থেকে গুলি চালান। এতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আহতরা হলেন- চান্দিনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা রূপনগর এলাকার বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে মাহমুদুল হাসান জনি সরকার (২৮)। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধ অপরজন হলেন চান্দিয়ারা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন নাঈম (২৮)। তিনি বরকইট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী। আহতদের চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গুলি চালানোর ঘটনায় চরম উত্তেজনা দেখা দিলে রেদোয়ান আহমেদ চান্দিনা থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মীরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে রেদোয়ানকে গ্রেপ্তার ও গুলি ছোড়ার বিচার দাবি করেন। এরপর পুলিশ রেদোয়ানের বিরুদ্ধে মামলা নেয় ও তাকে গ্রেপ্তার দেখায়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা সদরসহ থানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শরীফ জানান, চান্দিনা পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনের সামনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। গতকাল দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে আসার পর কলেজ গেটে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি থামিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি ঘুরে চলে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ
কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ দিয়ে ঢিল মারে। এ সময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে তার শটগান দিয়ে পরপর দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েন। এতে জনি ও নাজমুল আহত হন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম ছিল ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনে। আমাকে প্রধান অতিথি করে চিঠির মাধ্যমে পৌর এলডিপি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই মধ্যে আমাদের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে প্রোগ্রাম করার অনুমতি দেয়া হয়। দুপুরে আমি ক্যাম্পাস-২ এর সামনে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোকজন আমার গাড়িতে হামলা করে। আমি আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে গুলি চালাই। কার গায়ে গুলি লেগেছে আমি বলতে পারব না। পরে আমি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেই। তবে রেদোয়ান আহমেদের গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় থানা হেফাজতে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) মো. ফয়েজ ইকবাল জানান, গুলি চালানোর পর রেদোয়ান আহমেদ থানায় আশ্রয় নিতে আসলে আমরা তাকে আটক করি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রেদোয়ানের ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত- মির্জা ফখরুল : কুমিল্লার চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আগামী দিনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আরো কতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে এ ধরনের হামলার মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ড. রেদোয়ান আহমেদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
গতকাল সোমবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। এদিন কুমিল্লার চান্দিনায় রেদোয়ান আহমেদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি তার নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তলের গুলি ছুড়ে আত্মরক্ষা করেন। বর্তমানে স্থানীয় পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এলডিপির মহাসচিবের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় আবার প্রমাণিত হলো দেশে এখন ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশ নিতে চাইলেও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও নেতাদের ওপর হামলায় সরকারের স্ববিরোধিতাই ফুটে ওঠে।
অলি আহমদের নিন্দা
এলডিপি মহাসচিবের ওপর হামলা ও তাকে গ্রেপ্তার করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে তা বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকারের আমলে চলমান সন্ত্রাসী নমুনা।