বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো আফগানিস্তান

বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো আফগানিস্তান

৮ জুন ২০১৮ : দেরাদুনে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দিতাপূর্ণ তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশকে ১ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এই জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ৩-০ ব্যবধানে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিলো আফগানরা। এ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান করে আফগানরা। জবাবে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৪ রান করতে পারে বাংলাদেশ। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে আইসিসি টি-২০ র‌্যাংকিং-এ অষ্টমস্থানে উঠে এলো আফগানিস্তান। সিরিজ হেরে দশমস্থানেই রইল বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচে জিততে না পারলেও তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস লড়াইয়ে জয় পান আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাই। টস জিতেই প্রথমে ব্যাটিং-কে বেছে নেন তিনি। স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথম দু’ম্যাচে দলে না থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ বল হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
নিজের করা প্রথম ওভারেই ১৮ রান দেন মিরাজ। এরমধ্যে ১৪ রানই আসে আফগানিস্তানের মারকুটে ওপেনার ও উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শেহজাদের ব্যাট থেকে। শুরুতে রান তোলার গতি পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেননি শেহজাদ ও তার সঙ্গী উসমান গনি।
বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এ পাওয়ার প্লে’তে বিনা উইকেটে ৪৩ রান তুলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার শেহজাদ ও গনি। অষ্টম ওভারে দু’জনে বিচ্ছিন্ন হন আম্পায়ারের বির্তকিত সিদ্বান্তে।
বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামের চতুর্থ ডেলিভারিটি রির্ভাস সুইপ করতে গিয়েছিলেন শেহজাদ। বল গিয়ে লাগে শেহজাদের গ্লাভসে। বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের আপিলে শেহজাদকে লেগ বিফোর আউট দেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ বলে ২৬ রানে ফিরেন শেহজাদ।
পরের ওভারে আবারো সাফল্যের মুখ দেখে বাংলাদেশ। আরেক ওপেনার গনিকে শিকার করেন আবু জায়েদ। ২৬ বলে ১৯ রান করে থামেন গনি।
৫৯ রানে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ভালোভাবে টিকে থাকে বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় উইকেটে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক স্টানিকজাই ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। এই জুটির কাছ থেকে ২৪ বলে ৩৬ রান পায় দল। ৩টি ছক্কায় ১৭ বলে ২৭ রান করা স্টানিকজাইকে তুলে নেন প্রথমবারের মত এই সিরিজে খেলতে নামা আরিফুল হক।
সাত বল পর আবারো উইকেট শিকারের উল্লাসে মেতে উঠে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের শেষদিকে বাংলাদেশের হাতে মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে আনা মোহাম্মদ নবী এবার থেমে যান মাত্র ৩ রানে। আবু জায়েদের বলে মিড-অফে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল্লাহ। ফলে ১৪ দশমিক ১ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০১ রানের সংগ্রহ দাড়ায় আফগানিস্তানের।
এখান থেকে শেষ ৩৫ বলে ৪৪ রান যোগ করলে শেষ পর্যন্ত ১৪৫ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। শেষদিকে রান দেয়ায় কৃপণ ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। বিশেষভাবে ইনিংসের শেষ ওভারে। একটি উইকেট শিকারসহ মাত্র ৩ রান দেন বাংলাদেশের নাজমুল। তাই বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলারও ছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন নাজমুল। এছাড়া আবু জায়েদ ২টি, সাকিব ও আরিফুল ১টি করে উইকেট নেন। আফগানিস্তানের শেনওয়ারি ২৮ বলে অপরাজিত ৩৩ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান ১৫ রান করেন।
সিরিজ হার আগেই নিশ্চিত, তাই তৃতীয় ও শেষ টি-২০ জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ১৪৬ রানের টার্গেটে ভালো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ১৬ রানে প্রথম প্যাভিলিয়নে ফিরেন ওপেনার তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমানকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন তিনি। তখন তামিমের নামের পাশে ছিলো ৫ রান।
ব্যাটিং-এ প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে আসেন সৌম্য সরকার। ১টি করে চার-ছক্কায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু আশার বেলুন ফুটো করে দেন সৌম্য নিজেই। আরেক ওপেনার লিটনের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁেদ পড়েন সৌম্য, করেন ১৩ বলে ১৫ রান।
কিছুক্ষণ পর রান আউটে কাটা পড়ে নিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন লিটনও। রান নেয়ায় জন্য দৌঁড় দিয়ে মুশফিকুর রহিমের অনিচ্ছায় আউট হতে হয় লিটনকে। ১৪ বলে ১২ রান করেন তিনি।
লিটনের বিদায়ে ষষ্ঠ ওভারেই উইকেটে যাবার সুযোগ ঘটে সাকিবের। কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি বাংলাদেশের দলনেতা। এক্সট্রা কভারে শেনওয়ারির দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নিতে হয় সাকিবকে। ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১০ রান করেন সাকিব।
দলীয় ৫৩ রানে সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে সামনের দিকে টেনে নেন মুশফিকুর ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। উইকেটে টিকে থেকে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন তারা। ফলে শেষ ৫ ওভারে ৫৫ রানের লক্ষ্যমাত্র দাড়ায় টাইগারদের। এরপর ১২ বলে দলের প্রয়োজন ৩০ রানে নিয়ে আসেন মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহ।
১৯তম ওভারে আফগানিস্তানের ডান-হাতি পেসার করিম জানাতের প্রথম পাঁচ বল থেকেই পাঁচটি বাউন্ডারিতে ২০ রান তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নেন মুশফিকুর। এরপর ঐ ওভারের শেষ বলে ১ রান নিয়ে জয়ের জন্য ৬ বলে ৯ রানের টার্গেট দাড় করান মুশি।
তবে শেষ ওভারে আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদ খানের প্রথম বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মুশফিকুর। ৭টি চারে ৩৭ বলে ৪৬ রান করেন মুশফিকুর। পরের চার বল থেকে পাঁচ রান পায় বাংলাদেশ। ফলে শেষ বলে জয়ের জন্য ৪ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।
শেষ বলটি দক্ষতার সাথে বাউন্ডারির দিকেই মেরেছিলেন বাংলাদেশের আরিফুল। কিন্তু লং-অনে দুর্দান্ত ফিল্ডিং-এ বলকে বাউন্ডারির সীমানা পার হতে দেননি আফগানিস্তানের শফিক। এসময় ২ রান নিয়ে তৃতীয় রানের জন্য দৌড়ে রান আউট হন মাহমুদুল্লাহ। ফলে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৪ রান সংগ্রহ করে মাত্র ১ রানে ম্যাচ হারে টাইগাররা। মাহমুদুল্লাহ ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৫ রানে আউট হন। ৩ বলে ৫ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন আরিফুল। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মুশফিকুর। সিরিজ সেরা হন টি-২০র সেরা বোলার আফগানিস্তানের রশিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ১৪৫/৬, ২০ ওভার (শেনওয়ারি ৩৩*, স্টানিকজাই ২৭, নাজমুল ২/১৮)।
বাংলাদেশ : ১৪৪/৬, ২০ ওভার (মুশফিকুর ৪৬, মাহমুদুল্লাহ ৪৫, রশিদ ১/২৪)।
ফল : আফগানিস্তান ১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : রশিদ খান (আফগানিস্তান)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো।

খেলাধূলা