আগামী বছরে শেষ দিকে কিংবা পরের বছরের শুরুতেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতিতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছেন ক্ষমতাসীনরা। আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চায় তারা। এর জন্য নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতিতে আরও কৌশলী হতে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। সব কিছুতে ‘ছাড়’ দেয়া মানসিকতাও তৈরি করতে নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৭ মে শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে সেই চেষ্টা চালানো হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকের একাধিক সূত্র বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। বিএনপির সভা-সমাবেশে বাঁধা দেয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা ছেড়ে শৃঙ্খলাপূর্ণ সভা-সমাবেশের সুযোগ দেয়া হবে। একাধিক নেতা বলেন, বিরোধী দলের ব্যাপারে নেত্রী বলেছেন, তারা মিছিল-মিটিং সমাবেশ করুক। তারা স্বাধীনভাবে করুক। আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পানি ঘোলা করার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নিয়মের বাইরে অন্য কোনোভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে এক চুলও নড়বে না আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে নিয়ম মেনেই নির্বাচনে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জাদুঘরে চলে গেছে। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। এটাই নিয়ম, এর বাইরে অন্য কোনো পথ নেই। বিএনপিকে এ পদ্ধতি মেনেই নির্বাচনে আসতে হবে।
জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে ক্ষমতাসীনরা অন্যান্য দলকে নির্বাচনে ভেড়াতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়া। যা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে সেটির বাস্তবেও প্রমাণ মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে সরকারও আওয়ামী লীগ বিরোধী কথাবার্তাও বলতে শোনা যায়। তবে সেই অনুষ্ঠানগুলো করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি ছাত্রদলকে। শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, বিএনপির জন্য এই সুযোগ দিতে রাজী আওয়ামী লীগ এমনটাই স্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তারা বলেন, বিএনপি তো মাঠে অবস্থান করছেন। তারা নিজেরা নির্বাচনে যাবে বলে ঠিক। কিন্তু রাজনীতির মাঠ কিন্তু গোছাচ্ছেন। উপরে যাই বলুক না কেন, ভিতরে ভিতরে বিএনপি সংগঠনকে সক্রিয় করছেন। আমরা চাই তারা সংগঠনকে সক্রিয় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপির কাছে একটাই চাওয়া, অপরাজনীতি বন্ধ করে নির্বাচন মুখী হওয়া।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন,‘বিএনপি নিশ্চয়ই চাইবে, আমরা তাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেই, নিরপেক্ষ হবে, সুষ্ঠু হবে, প্রতিযোগিতামূলক হবে। সেটা করার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করব এবং তাদেরকে নিশ্চয়তা দেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন-সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করব। মানুষের আস্থা আসবে। নির্বাচনে কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করা হবে না। প্রভাবের ঊর্ধ্বে থাকবে। সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকেও সেই ভাবে নিদের্শ দেয়া হবে। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়।’