আগামী অর্থবছরে ১৫০টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক অর্থ খোঁজা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে ১০৫টি, মধ্যম অগ্রাধিকারে ৪১টি এবং নিু অগ্রাধিকারে আছে ৪টি। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১৪১টি। পরে সংশোধিত এডিপি তৈরির সময় ৯টি প্রকল্প কমিয়ে ধরা হয় ১৩২টি।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাড়ছে ১৮টি। এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে একটি তালিকা যুক্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। বৈদেশিক অর্থায়নের সম্ভাব্য উৎস হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), চীন, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ভারত, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং কোরিয়া।
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এটি একটি অগ্রাধিকার তালিকা। এখানে যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুক্ত করা হয়েছে। এডিপিতে এই তালিকাটি থাকায় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী উভয়পক্ষেরই সুবিধা হবে। তবে ২৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে একটি নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন এখনই দেশ ও জাতির জন্য যেসব প্রকল্প বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ নির্দেশনা মেনে বৈদেশিক সহায়তার জন্য নির্ধারিত এসব প্রকল্পের অগ্রাধিকারও পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
সূত্র জানায়, বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৭টি পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৯টি। তৃতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৪টি। অন্যান্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ছয়টি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে পাঁচটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে চারটি এবং কৃষি খাতে রয়েছে পাঁচটি। এছাড়া পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে আটটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে একটি, স্বাস্থ্য খাতে একটি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে দুটি, শিক্ষা খাতে নয়টি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৭টি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে দুটি প্রকল্প।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেনবলেন, এডিপির এরকম তালিকা থাকলে পরে একটা ভিত্তি তৈরি হয়। তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা বুঝতে পারে এসব প্রকল্প সরকার ‘ওন’ করছে বা গুরুত্ব দিচ্ছে। তখন তারা প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর আগে একবার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের একটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের বোর্ড ঋণ অনুমোদন করেছিল। কিন্তু পরে একনেকে এসে সেটি আর অনুমোদন পায়নি। এতে একটি খারাপ ধারণা তৈরি হয়। এখন যেহেতু প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত আছে সেহেতু এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে যেসব প্রকল্প রাখা হয়েছে সেগুলো সত্যিই অর্থনীতি, দেশ ও জাতির জন্য কার্যকরী কিনা সেটি ভালো করে ভেবে দেখা দরকর।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩৭ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। এটি সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে ধরে জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ হাজার ৫৭৪ কোটি এবং ভারতীয় এলওসির ঋণ থেকে ৮ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ‘বাপবিরোর বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি পোল মাউন্টেড উপকেন্দ্রের পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা আরও কয়েকটি প্রকল্প হলো-‘ইকনোমিক এ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স ফর নিট’ প্রকল্প। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের নগর ও গ্রামের জীবনযাত্রার আধুনিকায়ন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, কালিয়াকৈরে একটি সমন্বিত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপন এবং ইন্টিগ্রেটিং পপুলেশন ডাইনামিকস এনটু ন্যাশনাল প্ল্যান অ্যান্ড পলিসি প্রকল্প।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরআডি) সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, তালিকায় থাকা মানে অর্থায়নের নিশ্চয়তা নয়। কেননা যতদিন পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর না হবে ততদিন অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা কথাটি বলা যায় না। তবে এসব প্রকল্প উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নেগোশিয়েশনের (আলোচনা) বিভিন্ন পর্যায়ে থাকতে পারে। সেজন্যই হয়তো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় রাখা হয় সরকারের অগ্রাধিকার বোঝানোর জন্য।