শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করে ‘গোল্ডেন হারভেস্ট’

শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করে ‘গোল্ডেন হারভেস্ট’

আমদানি করা পণ্যের এক এইচএস কোডের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে অন্য এইচএস কোড। সেই মিথ্যা এইচএস কোডে পণ্যমূল্য কম দেখিয়ে শুল্কায়ন করে খালাস নেয়া হয়েছে। গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এমন কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির আমদানি পণ্যে এমন শুল্ককর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট। ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে ‘ক্রিসপি ব্রেড অরগানিক কালার পাউডার’ পণ্য আমদানি করে। ৭ মার্চ ১৯০৫.১০.০০ এইচএস কোডে শুল্কায়ন করে সেই পণ্য খালাস নেয়া হয়, যাতে শুল্ককর হিসেবে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৪ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট পরিশোধ করা হয়। কিন্তু আলোচ্য পণ্যের বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষিত এইচএস কোড ১৯০৫.১০.০০-এর বর্ণনায় রয়েছে ‘ক্রিসপি ব্রেড’, যা বিল অব এন্ট্রি এর ঘোষণার সঙ্গে মিল নেই। এইচএস কোড ১৯০৫.১০.০০-এর পণ্য ‘ক্রিসপি ব্রেড’-এর ব্যাখ্যায় রয়েছে, এই পণ্যগুলো ‘থিন রেকট্যাংগুলার অর রাউন্ড পিক্টড পিসেস অব ব্রেড’। এবং অনলাইনে ক্রিসপি ব্রেডকে ব্রেড এর বিভিন্ন আকারের টুকরা উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরদিকে, গোল্ডেন হারভেস্টের আমদানি করা অরগানিক কালার পাউডার পণ্যগুলোর সম্পর্কে অনলাইন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এই পণ্যগুলো ‘ইউনিফর্ম ব্রেড গ্রানুলাস’। সে হিসেবে আমদানি করা অরগানিক কালার পাউডার পণ্যের বিল অব এন্ট্রিতে ঘোষিত এবং শুল্কায়িত এইচএস কোড সঠিক হয়নি। বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ (বিসিটি) বইয়ে উল্লেখিত পণ্যের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী আমদানি করা ‘ক্রিসপি ব্রেড অরগানিক কালার পাউডার’ পণ্যের সঠিক এইচএস কোড হবে ১৯০৫.৯০.০০, যার শুল্ককর হবে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের দুই এসআরও অনুযায়ী ১৯০৫.৯০.০০-এইচএস কোডে তালিকাভুক্ত পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৪ ডলার। আর গোল্ডেন হারভেস্টের শুল্কায়ন করা ১৯০৫.১০.০০ এইচএস কোডে তালিকাভুক্ত পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২ দশমিক ২০ ডলার। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিতে অসত্য এইচএস কোডে পণ্য শুল্কায়ন করে খালাস নিয়েছে। ৪ ডলার অনুযায়ী গোল্ডেন হারভেস্টের খালাস নেয়া পণ্যে মোট ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৪ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

কাস্টমস মূল্যায়নের নিরীক্ষা দল অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের ডাটাবেজ পর্যালোচনা করে দেখেছেন, ১৯০৫.৯০.০০ এইচএস কোডে ৪ ডলার মূল্যে একই ধরনের বহু পণ্য শুল্কায়ন ও খালাস হয়েছে। অর্থাৎ গোল্ডেন হারভেস্ট জেনেশুনে শুল্ককর ফাঁকি দিতে অসত্য এইচএস কোডে পণ্য শুল্কায়ন করে খালাস নিয়েছে। মিথ্যা এইচএস কোডে শুল্কায়ন করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কয়েকদিন চেষ্টা করেও গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রাজীব সামদানীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গোল্ডেন হারভেস্টের কোম্পানি সেক্রেটারি নির্মল চন্দ্র সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ পরে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান, ‘কোম্পানির লোকজন বিষয়টি জানেন না।’ বক্তব্য নিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম্বার চাইলে তিনি দিতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রোর অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১০৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২। এর মধ্যে ৩২ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। এছাড়া ৩৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ২ জুন গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রোর শেয়ার সর্বশেষ ১৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য