ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতার মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তির পর মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। চরম ইসলাম-বিদ্বেষী ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বয়কটের জন্য সোশাল মিডিয়ায় হু হু করে বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে দেশে শুরু হয়েছে ভারতীয় পণ্য বয়কটের হিড়িক।
কটুক্তির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে আরব বিশ্ব ফুঁসে উঠেছে। সৌদি আরব, কাতার, ইরান, কুয়েত এ নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এসব দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও হজরত আয়েশা (রা.) কে নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল। তাদের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নেট দুনিয়ার বাসিন্দারা। দেশে দেশে কোটি কোটি মুসলমান ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে #BoycottIndianproducts.
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিও-ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরবের সুপারস্টোরগুলো থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। অনেক স্টোরে ভারতীয় পণ্যগুলো প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিয়ে পণ্য বয়কটের পোস্টার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। দোকান-বাজার থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলতে দেখা যায় কিছু ছবিতে।
এদিকে, উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় পণ্য বয়কটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আহ্বানের কারণে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় জনতা পার্টি রোববার একজন মুখপাত্রকে বরখাস্ত করেছে এবং অন্য একজনকে বহিষ্কার করেছে।
বাংলাদেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ইসলামিবিদ্বেষী ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানোরও আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি সকলের প্রতি ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাসুল (স.)কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ফেসবুকে এনামুল হক নামে একজন লিখেছেন, ‘‘ধিক্কার জানাই বিজিপি সরকার ও তাদের অনুসারীদের। ক্ষমতার জোরে তাদের মাথা ঠিক নেই। মুসলিম বিদ্বেষ যখনই চরম পর্যায়ে তখন আবার আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় রাসূলকে নিয়ে দৃষ্টতাপূর্ন মন্তব্য। যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাব প্রতিবাদ জানানো। আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে এই সমস্ত কুলাঙ্গারের বিনাশের জন্য মহান রবের নিকট প্রার্থনা করছি।’’
সুব্রত বি দাস নামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘‘বিজেপির মুখপাত্রদের উচিত দ্রুত তাদের কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া। সবার মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং অন্য ধর্মকে সম্মান জানানোর মন-মানষিকতা থাকা উচিত।’’
ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে রাফিয়া সুলতানা স্মৃতি লিখেছেন, ‘‘আজ থেকে আমি ভারতের পণ্য বর্জন করলাম। আমার রাসুলকে নিয়ে বাজে মন্তব্য এটা সহ্য করতে পারবোনা। তবে এর থেকে বেশি কিছু করার সাধ্য নেই আমার।’’
এম এস জনি চৌধুরী লিখেছেন, ইন্ডিয়ার উপর আরব দেশসমুহের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, যদিও খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখানো হইছে। তবুও শুরু তো হইছে। ইন্ডিয়াতে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে যে ভাবে মুসলিম বিদ্বেষমূলক আচরণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এটা আধুনিক বিশ্বে নজিরবিহীন ও নক্করজনক উদাহরণ।’’
মজিবুল রহমান লিখেছেন, ‘‘বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর থেকে বিজেপি নেতাদের ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব আরো চাঙ্গা হয়েছে । এখন ওরা শত শত বছর পুরাতন মসজিদ সমুহকে একের পর এক ভাঙ্গার পরিকল্পনা করছে। যার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ কারন হয়ে দাড়িয়েছে।’’