কভিড-১৯ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজ সংসদীয় এলাকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকা করে খরচ করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে দেওয়া হচ্ছে এই অর্থ। ৩০ লাখ টাকা করে ৩০০ সংসদ সদস্য পাচ্ছেন মোট ৯০ কোটি টাকা।
চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ওই অর্থ খরচ করে অগ্রগতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবগত করতে হবে। এরই মধ্যে গত ১ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৩৬ জন সংসদ সদস্যকে এ খাতের অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য সব এমপিও এই অর্থ পাবেন বলে জানা গেছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে খরচের জন্য আইনপ্রণেতাদের এ ধরনের অর্থ বরাদ্দ এবারই প্রথম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক খাত থেকে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট চিঠিপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউপি-২ শাখা) মো. আকবর হোসেন গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী এ খাতে সংসদ সদস্যদের প্রত্যেককে ৩০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যয় করবে। পর্যায়ক্রমে সব সংসদ সদস্যকে এ অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটে ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক থোক বরাদ্দ আছে ৫০০ কোটি টাকা। এ খাতের আওতায় ইউনিয়নের অনগ্রসরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কভিড-১৯ মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী ১০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে এমপিদের প্রত্যেককে ৩০ লাখ টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ খাত থেকে এমপিদের নামে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া এবারই প্রথম। এর আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) টাকা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া হতো। যা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। এবারই প্রথম এমপিরা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অর্থ নিয়ে ইউনিয়নে খরচ করতে পারছেন। তবে এ অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে রয়েছে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা। বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) মানার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা ব্যবহার নির্দেশনাসহ সরকারের সব ধরনের বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কভিড মোকাবিলার সঙ্গে কৃষি ও ক্ষুদ্র সেচ, বস্তুগত অবকাঠামো এবং আর্থসামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী যৌথভাবে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ইউএনও ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে হবে। অর্থ ব্যয়ে কোনো অনিয়ম হলে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাই দায়ী থাকবেন।
তড়িঘড়ি করে এমন অর্থ খরচে অনিয়ম রোধে মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করার ইচ্ছা থাকলে সব জায়গায় করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ এমপিদের নামে বরাদ্দ হলেও আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা দুজনই উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। তারা এ বিষয়ে নিশ্চয়ই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।’