রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে হতাশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক। মহামারি করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় জানুয়ারিতে এক পূর্বাভাসে সংস্থাটি বলেছিল ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। কিন্তু এখন বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে এই প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে। তবে বাংলাদেশের পূর্বাভাস কমায়নি বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, পূর্বের পূর্বাভাস অনুযায়ী বাংলাদেশে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জিত হবে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
‘প্রবৃদ্ধিতে তীক্ষè মন্দার মধ্যে স্থবিরতার ঝুঁকি বেড়েছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতির হালচাল নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংক সদর দফতর থেকে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন করেছিল দেশটি। আর এটি ২০২২ সালের প্রথম দিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে তা খানিকটা কমে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ অর্জিত হবে। বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও বেড়ে হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশটি। গত বছরের ৭ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্ট আপডেট’ রিপোর্টেও বিশ্বব্যাংক বলেছিল চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবশ্য ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
মহামারি শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা ছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। সরকার গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্বলন করা হয়েছিল। অর্থবছর শেষে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ অর্জনের হিসাব দিয়েছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) কষে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে লক্ষ্যের বেশি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্জিত হবে। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির প‚র্বাভাসে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৪ শতাংশে নেমে আসবে। ভুটানে এই অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী অর্থবছরে হবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। নেপালে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে হবে; আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতির হালচাল নিয়ে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন করোনা মহামারি থেকে ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, অনেক দেশ মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। এই আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির বড় ধরনের সঙ্কট ডেকে এনেছে। যা বিশ্বের অর্থনীতিকে ছোট করে ফেলছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির’র দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিশ্বকে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনে নতুন কোভিড-১৯ লকডাউন, সরবরাহ-শৃঙ্খলে বিঘœ এবং স্থবিরতার ঝুঁকি, দুর্বল প্রবৃদ্ধির সময়কাল এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি-সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অবস্থা এখন দেখা দিয়েছে, তা ১৯৭০ সালের বিশ্ব মন্দার পর আর দেখা যায়নি।