সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদেশি শিপিং লাইন বাংলাদেশের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। স্থান সংকট দেখিয়ে সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষও এ পণ্যের পরিবহন সীমিত করেছে। ফলে চারটি ডিপোতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ১১৩ টিইইউস হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আটকে পড়েছে।
শিপিংসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে দুর্ঘটনার পরপর তিনটি বেদেশি শিপিং লাইন বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন না করার ঘোষণা দেয়। বর্তমানে নিয়মিত এ ধরনের ঘোষণা আসছে। বিএম ডিপোর ঘটনার পর আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে শিপিং কোম্পানিগুলো। তবে এ নিষেধাজ্ঞা যে কোনো সময় ওঠে যেতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জানা গেছে, ওয়ান লাইন ইতোমধ্যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডবাহী কনটেইনার পরিবহন না করার ঘোষণা দিয়েছে। বুকিং বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ৪ জুন এ ধরনের কনটেইনার পরিবহন করেছিল। বিপজ্জনক কনটেইনার নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা হলে পুনরায় শুরু করবে। জাপানভিত্তিক ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস লাইন (ওয়ান লাইন) ছাড়াও চীনভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিস কনটেইনার লাইন (ওওসিএল), হংকংভিত্তিক গোল্ডস্টার লাইন এবং মায়ের্কস লাইনও এই ধরনের কনটেইনার পরিবহন করবে না বলে গ্রাহকদের জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে সামিট এলায়েন্স পোর্ট (উত্তর) ৪৯, পোর্ট লিংক লজিস্টিকসে ৩৩, ইস্টার্ন লজিস্টিকসে ২৪, কেঅ্যান্ডটি লজিস্টিকসে ৭ টিইইউস রয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমীন শিকদার জানান, চারটি ডিপোতে ১১৩ টিইইউস মতো আটকা পড়েছে। হাউড্রোজেন পারঅক্সাইডবাহী এসব কনটেইনার রপ্তানির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে; কেবল জাহাজে তোলার অপেক্ষায় ছিল। এমন সময়ে এই ধরনের কনটেইনার পরিবহন না করার ঘোষণা এলো। কয়েকটি শিপিং লাইন পরিবহন করবে না, আর কিছু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। শিপিং লাইনগুলো পরিবহন না করলে শেষ পর্যন্ত কনটেইনারগুলো কারখানায় ফেরত পাঠাতে হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, বিএম ডিপোর ঘটনায় পুরো শিপিং সেক্টরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিন বিপজ্জনক পণ্যপরিবহন না করার ঘোষণা আসছে। বাংলাদেশ থেকে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত দেড়শ শিপিং এজেন্ট এ ধরনের পণ্যপরিবহন করে। অধিকাংশই জানিয়ে দিয়েছে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন করবে না। এসব পণ্য নিয়ে এখন নানামুখী জটিলতা তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডবাহী কনটেইনার যথাযথভাবে মজুদ, সংরক্ষণ না হওয়ায় সেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের। এর আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৩৩ টিইইউস হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি রপ্তানি কনটেইনার আনা হয়। আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড পণ্যগুলো রপ্তানি করছিল। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ডিপো মালিক চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপ।
জানা গেছে, ৩৩ টিইইউর মধ্যে ২০ টিইইউস মায়ের্কস লাইনের জাহাজে এবং ১৩ টিইইউস ওয়ান শিপিং লাইনের জাহাজে যাওয়ার কথা ছিল।
এদিকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহন সীমিতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন শিপিং অপারেটরকে চিঠি দিয়ে চালান পরিবহন সীমিত করার বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিজেদের টার্মিনালে এই ধরনের বিপজ্জনক কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়া এবং নিরাপত্তা সতর্কতা হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যা গত ৯ জুন সিঙ্গাপুর বন্দর ব্যবহারকারী সব শিপিং লাইনকে জানানো হয়েছে। বিএম ডিপোর দুর্ঘটনায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মজুদের বিষয়টি উঠে আসার পর সিঙ্গাপুর বন্দর এমন ঘোষণা দিল। এতে সিঙ্গাপুর বন্দর ব্যবহার করে হাউড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানির পথ বন্ধ হয়ে গেল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক এ ধরনের কোনো নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, আমরা এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মজুদ বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে চালান সীমিতের ঘোষণা দিয়েছে। তারা মেইন লাইন শিপিং অপারেটরগুলোকে জানিয়েছে।