হৃৎপিন্ডে রিং পরানোর পর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। হৃৎপিন্ডে আরও দুটি ব্লকসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে তার। শনিবার দুপুরে অস্ত্রোপচারের পর থেকে এখনো ৪৮ ঘণ্টাও পার হয়নি। সিসিইউতে কার্ডিওলজিস্টদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সিসিইউ কক্ষে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া অন্য সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত রোগীর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ চিকিৎসকরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, শনিবার ম্যাডামের হার্টে এনজিওগ্রাম করার পর তিনটি ব্লক পাওয়া যায়। একটি ব্লক মেইন গ্রেট ভ্যাসেল, যেটি লেফট সাইডে। এর মধ্যে মোর দ্যান ৯৫% ব্লক ছিল। যার কারণে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ওখানে সঙ্গে সঙ্গে স্টেন্টিং করা হয়েছে।
ডা. জাহিদ বলেন, বর্তমানে সিসিইউতে কার্ডিওলজিস্টদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ডাক্তারদের বক্তব্য হলো, ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো কমেন্ট করা সঠিক হবে না। সে জন্য চিকিৎসকরা কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের হৃৎপিন্ডের বাকি দুটি ব্লক সম্পর্কে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, বাকি দুটি ব্লকের ব্যাপারে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ তার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ও ক্রনিক লিভার ডিজিজ আছে। এ ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ তিনি ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে কিডনির ক্ষতিগ্রস্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য আরও দুটি ব্লক অপসারণের কাজ বাকি রাখা হয়েছে।
নানা দিক বিবেচনা করে মেডিকেল বোর্ড যে ব্লকটা বেশি ক্রিটিক্যাল, যেটা তাকে শারীরিকভাবে বেশি কষ্ট দিচ্ছে, সেটাতে স্টেন্টিং করেছে। একিউট ইমারজেন্সি যেটা হয়েছিল, সেটা থেকে ওভারকাম করার জন্যই গতকাল (শনিবার) একটা ব্লক অপারেশনের মাধ্যমে সরানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পেশেন্টের (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসার ব্যাপারে ডাক্তাররা সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছেন। টাইম টু টাইম তার স্বাস্থ্যের প্রতি চিকিৎসকরা নজর রাখছেন। ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) পরিবারসহ কাউকেই তারা এখন হাসপাতালে দেখা করার অনুমতি দিচ্ছেন না। চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আমরা নিজেরাও সেখানে বেশি যাতায়াত করছি না। বাইরে থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার করছি। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা পরিচালনা করছে।’ অধ্যাপক জাহিদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার আশু আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
মাইল্ড হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পর শনিবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার হৃৎপিন্ডে একটি ব্লক অপসারণ করে সেখানে স্টেন্টিং করা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত বসুন্ধরা এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। গত বছর ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তার শরীরে কয়েক দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ২৮ নভেম্বর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ রাখছেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে সরাসরি চিকিৎসকদের কাছ থেকে মায়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। অন্যদিকে ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি চিকিৎসক ও খালেদা জিয়ার ভাই-বোনদের কাছ থেকে শাশুড়ির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন। তবে তিনি শাশুড়িকে দেখতে দেশে আসবেন কি না সেটি এখনো ঠিক হয়নি।