নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর বাইরে উচ্চ আদালতের নির্দেশের (স্থগিতাদেশ) কারণে ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
খেলাপি ঋণ আদায়ে খেলাপি গ্রাহক চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এক ব্যাংকের খেলাপি অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলদেশ থেকে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অর্থ পাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রাক্কলন করে থাকে। যার যথার্যথতা ওই সব প্রতিষ্ঠানও দাবি করে না। ওই সব সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দেখা যায়। তবে দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাত্রা বা পরিমাণ যা–ই হোক না কেন, পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সচেষ্ট ও তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে পাচারকৃত ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউই) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষেত্রমত দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে সরবরাহ করে আসছে। বিদেশে (যথা-সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি) ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পাচারবিষয়ক বেশ কিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়েরকৃত পাচার–সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু মামলা চলমান রয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলো অনেক শক্তিশালী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ বৈদেশিক ঋণ বাণিজ্যিক ও সার্বভৌম বন্ডে নেওয়া, যেগুলোর সুদহার বেশি ও পাঁচ বছরে সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকাল অনেক বেশি এবং স্বল্প সুদে নেওয়া।
বাংলাদেশ সরকারের কোনো ‘সভরেন বন্ড’ নেই। বাংলাদেশে বর্তমান ঋণ পরিস্থিতি সহনশীল ও টেকসই মাত্রায় রয়েছে এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে শ্রীলঙ্কার মতো বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই।