২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা
গত বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান
গতকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে
আজ-কালের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুল-কলেজে ক্লাস হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গতকাল সোমবার আবার ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। আতঙ্কে কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাঁরা আশা করছেন, আজ-কালের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। গতকাল সকালে বৃষ্টির কারণেও অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারেনি বলে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তাঁকে জানিয়েছেন।
যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে, সেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রোববার কম থাকলেও গতকাল প্রায় ৮০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলনে নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামেনি। এ কারণে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগেই ছুটি ঘোষণা করে।
গত রোববার ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফেরাতে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আহ্বান জানান।
তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বলছেন, সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। যে অভিভাবকেরা সাহস করে সন্তানকে পাঠাচ্ছেন, তাঁরাও সন্তান ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকছেন।
গতকাল রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের (এখানে স্কুল শাখা আছে) অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, এ স্কুলে এক দিন না গেলেই ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। একটানা তিন দিন অনুপস্থিত থাকলে ভর্তি বাতিল করে দেয়। কোনো শিক্ষার্থী বিনা নোটিশে স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তাই ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে উপায় নেই।
ধানমন্ডি গার্লস স্কুলে দুই মেয়ে পড়ছে উল্লেখ করে এক মা বলেন, গতকাল স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল কম।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধানমন্ডি শাখার একজন শিক্ষার্থী জানায়, গতকাল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। এর মধ্যেই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছেন শিক্ষকেরা। এ ছাড়া শিক্ষকেরা প্রতি ক্লাসে এসে বলে গেছেন, মঙ্গলবার (আজ) থেকে কেউ যাতে স্কুলে অনুপস্থিত না থাকে।
গতকাল মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল কোনো কোনো ক্লাসে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ, আবার কোনো কোনো ক্লাসে ৫০ শতাংশের মতো উপস্থিতি ছিল।
এ ছাড়া লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা ছিল।
স্কুল-কলেজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত তাঁর সন্তান অপেক্ষায় ছিল-বর্তমান পরিস্থিতির জন্য হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বা প্রেজেন্টেশন হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক শিক্ষককে মেইল করলে তিনি জানিয়ে দেন, সোমবার যারা উপস্থিত থাকবে না, তারা কোনো নম্বর পাবে না। ফলে তাঁর মেয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর এই অভিভাবক আরও বলেন, গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় সারা দিন মেয়ে আটকে ছিল ক্যাম্পাসে। এ অবস্থাতেও বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা নিয়েছেন শিক্ষকেরা। বিকেল পাঁচটার দিকে শিক্ষক ও পুলিশের সহায়তায় মেয়ে কোনো রকমে বাসায় ফিরেছে। পরিস্থিতি শান্ত না হলে কোনো অবস্থাতেই মেয়েকে ক্যাম্পাসে যেতে দেবেন না বলে জানান তিনি।
নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে সোমবারের পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।