দেশজুড়ে কয়েক দিন ধরে চলছে লোডশেডিং। প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে রাজধানীর ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানগুলোতে বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বিক্রি। অনেকেই কিনছেন এলইডি লাইটও। চাহিদা বাড়ায় এরই মধ্যে চার্জার ফ্যান ও লাইটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফ্যানের দাম ২০০-৩০০ ও লাইট কিনতে ২০-৩০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট ও কাপ্তান বাজারের এরশাদ মার্কেট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, সারা দেশ হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। এ সময়ে তাপমাত্রাও গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। প্রচণ্ড গরমে বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। পরিবারের এই দুই শ্রেণির সদস্যদের কথা চিন্তা করে চার্জার ফ্যান ও লাইট কিনছেন তারা।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আসিফ বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি। কিন্তু এই সপ্তাহের শুরু থেকে প্রায় রাতেই বিদ্যুৎ থাকে না। এতে করে ঘরের শিশু ও বৃদ্ধদের ঘুমের সমস্যা হয়। গরম থেকে বাঁচতে তাই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ২৪ ঘণ্টায় দুই-তিনবার বিদ্যুৎ চলে যায়। বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তাদের পড়ায় যেন সমস্যা না হয় তাই ফ্যানের সঙ্গে চার্জার লাইটও কিনে নিয়েছি। তবে আগের থেকে ফ্যান ও লাইট বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।’
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খলিল সুলভ মূল্যে চার্জার লাইট কিনতে মহাখালী থেকে গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখেন দাম আরও বেশি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এরই মধ্যে চার্জার লাইটের দাম বেড়ে গেছে। আগে যেসব লাইট ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত; এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়।’
স্টকে থাকা ইলেকট্রনিকস পণ্যের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বেশি থাকায় পুরনো সব মাল বিক্রি হয়ে গেছে। পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা নতুন পণ্যের দাম বাড়তি পড়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
খুচরা বাজারের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শোভা কোম্পানির ১২ ইঞ্চির টেবিল ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়; যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। ডিপেনডেট ও শানাক কোম্পানির প্রতিটি চার্জার ফ্যানের দামও ২০০ টাকা বেড়েছে। ডিপেনডেট কোম্পানির ফ্যান আগে বিক্রি হতো ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে এইচ রহমান ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তফা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আমাদের কাছে থাকা গত বছরের সব চার্জার ফ্যান বিক্রি হয়ে গেছে। কয়েক মাস পরে দেশে শীত শুরু হবে তাই নতুন করে কোনো পণ্য আমাদনি করা হচ্ছে না। তবে ক্রেতার চাহিদা থাকায় এখন ডিলারদের কাছ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে ফ্যান আনতে হচ্ছে। ফলে আমরাও বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।’
সানিয়ো ইলেকট্রনিকের দোকানি গোলাম রাব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লোডশেডিং বাড়ায় এই গরমে আমাদের কিছুটা বিক্রি বেড়েছে। বর্তমানে যারা দোকানে আসছেন তাদের অধিকাংশই চার্জার ফ্যান কিনছেন। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে গেছেন। মাঝারি সাইজের এই ফ্যানের দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।’
ফ্যানের বিক্রি বাড়লেও লাইটের বিক্রি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন কাপ্তান বাজারের এরশাদ মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বর্তমানে তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। আগের মতো বিক্রি নেই। দোকান ভাড়া ওঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
চাঁদ ইলেকট্রনিকের কর্ণধার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে লোডশেডিং দেখা দিলেও আগের মতো বিক্রি নেই। দিন যত যাচ্ছে, ততই বিক্রি কমে আসছে। তবে বিদ্যুতের চলমান সংকট আগামী কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হলে বিক্রি বাড়বে।’
কয়েক বছর ধরে এরশাদ মার্কেটের পাশেই ফুটপাতে চার্জার লাইট বিক্রি করেন লিটন। তার কাছে এসিডিসি ও এসএম কোম্পানির ২০ ওয়ার্ডের চার্জার লাইট পাওয়া যায়। প্রতিটির মূল্য ১০০-১৫০ টাকা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা চার্জার লাইটের দাম চলতি বছর তেমন একটা বাড়েনি। এখন পর্যন্ত চার্জার লাইটের তেমন একটা চাহিদা বাড়েনি। তবে রাতের বেলায় লোডশেডিং বেশি হলে এসব লাইটের চাহিদাও বেড়ে যাবে।