ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আরও দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা- এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর তার একটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপিসহ ৫ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে উদ্ধার হওয়া টাকা গোনার পর সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকা আবাসন কমিটির সম্পাদক অঙ্কিত চুরারিয়া আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, বেলঘরিয়ায় উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি। তবে ইডির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো তথ্যই নিশ্চিত নয়।
তবে সম্ভাব্য দুর্নীতি তদন্তকারী ইডির তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না-দেওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু ধরা হচ্ছে না।
একটি সূত্রে দাবি, উদ্ধার হয়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ রুপির সোনা যাতে বার বেশি, গয়না কম। এ ছাড়া বেশ কিছু সম্পত্তির দলিল ও সম্পত্তি সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মীদের এনে মোট চারটি বড় যন্ত্রে চালানো হয় টাকা গোনার কাজ। সাধারণত ওই যন্ত্র ব্যবহার হয় ‘কারেন্সি চেস্ট’-এ। ইডির একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে পাঁচটি সাধারণ যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকার পরিমাণ দেখে বড়মাপের যন্ত্র আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে বেলঘরিয়ার ওই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে সেখানে ঢোকেন ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটের মতো সেখানেও টাকার পাহাড় দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেন বিশেষ যন্ত্র আনানোর। অর্পিতাকে জেরা করেই তারা ওই টাকার হদিস পান বলে সূত্রের বক্তব্য।
ইডির একটি সূত্র বলেন, অর্পিতা তাদের বলেছেন, তার কয়েকটি ফ্ল্যাটকে নগদ টাকা গচ্ছিত রাখার জন্য ‘মিনি ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ শুরু হয় টাকা গোনা। শেষ হতে হতে বৃহস্পতিবার ভোর হয়ে যায়। নোটগণনার সাক্ষী হিসেবে একজনকে ওপরে নিয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
তার আগেই ২০টি ট্রাঙ্কসহ একটি বড় ট্রাক নিয়ে আসা হয়েছিল ওই আবাসনে। ওই ট্রাঙ্কে ভরেই উদ্ধার-করা টাকা নিয়ে যাওয়া হয়।
বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন’ আবাসনে বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ পৌঁছায় ইডি। ওই আবাসনে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। দু’টি ফ্ল্যাটের একটিতে নগদ অর্থের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। তল্লাশির পর অন্য ফ্ল্যাটটিও ‘সিল’ করে দেওয়া হয়।
প্রথম রাউন্ডে গণনার পর ১৫ কোটি রুপি উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তার পরেও গণনা চলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তা ওঠে ২০ কোটিতে। ভোরে গোনার কাজ শেষ হলেও ইডির তরফে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
টাকার সঠিক অঙ্কের কথাও জানানো হয়নি। ফলে বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ঠিক কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার নিশ্চিত হিসাব কেউই দিতে পারছেন না।
ধারণা করা হচ্ছে, ইডি জানালে বা আদালতে নথি পেশ করার সময় বেলঘরিয়া থেকে উদ্ধার-হওয়া নগদ টাকা এবং অলঙ্কারের হিসাব মিলবে। হিসাব পাওয়া যেতে পারে সরকারি ‘জব্দ তালিকা’ থেকেও।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুলাই টালিগঞ্জের একটি আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটি রুপি, সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। তার পর জানা যায়, বেলঘরিয়াতেও ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। বুধবার সেখানেই অভিযান চালায় ইডি। এই বিপুল নগদ অর্থের সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে বলে ধারণা। উল্লেখ্য, বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী পার্থ আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা