কপাল পুড়বে বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিদের ♦ আমলনামা শেখ হাসিনার টেবিলে ♦ জনবান্ধব ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার

কপাল পুড়বে বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিদের ♦ আমলনামা শেখ হাসিনার টেবিলে ♦ জনবান্ধব ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ভোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হবে বিএনপি। এটি মাথায় রেখে সারা দেশে ৩০০ আসনে জরিপ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন পদ্ধতিতে এই জরিপ করছেন। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবার ‘জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের আমলনামা শেখ হাসিনার টেবিলে। যাদের কারণে দলের ও সরকারের ভারমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে তারা ‘শাস্তি স্বরূপ’ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাবেন না বলে দলীয় ও গণভবন সূত্র জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান  বলেন, ‘শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কোনো জনবিচ্ছিন্ন, দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন, বিতর্কিত, এলাকায় বদনাম আছে এমন কাউকে অতীতেও দল মনোনয়ন দেয়নি, আগামীতেও দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে আরও কড়াকড়িভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ, এই নির্বাচন খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই নৌকা দেওয়া হবে। যাদের কারণে দল ও সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না-এটাই দলীয় সভানেত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে একাধিক সংস্থা, নিজস্ব টিম, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্বারা সর্বশেষ প্রতিবেদন নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও তিন মাস পর পর মাঠ জরিপের ফলাফলও এখন পর্যালোচনা করছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
গণভবনের একটি সূত্র জানায়, গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বেশ কিছু এমপি-মন্ত্রীর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। দলীয় নেতা-কর্মীদের পেটানো, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ, দলের ভিতরে গ্রুপিং তৈরি, নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর, কাবিখাতে দুর্নীতি, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়নবাণিজ্য, আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা, এমপি লীগ, ভাই লীগ সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগ।

সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তৃণমূলের ত্যাগী-পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত-পদবঞ্চিত দুর্দিনে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় থাকা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কৌশল নিতে যাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে দেখা-সাক্ষাতের বিধিনিষেধ শিথিল করে জেলা-উপজেলা নেতাদের ডেকে কথা বলবেন দলীয় প্রধান।

জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিভেদ-বিভাজন দূর করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশনার পর কাজ শুরু করেছেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে দলের দুর্দিনের পরীক্ষিতদের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে নিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের টার্গেট শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘গুরুত্বপূর্ন’ বিবেচনা করে প্রতিটি আসনে বর্তমান দলীয় এমপি এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনেক আসনে বিকল্প এক বা একাধিক প্রার্থীর কথাও ভাবা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এগুলো মনিটরিং করছেন।’

সূত্রে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য থাকবে অন্তত ২১০টি আসন। ২১০টি আসনকে লক্ষ্যমাত্রা রেখেই নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করবে দলটি। এ জন্য দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক এমপি-মন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যক্রম মনিটরিং করছেন ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। যেসব এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকাবিরোধী কার্যক্রম ও বিদ্রোহীদের ইন্ধন দেওয়া, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ক্ষমতার প্রভাব দেখানো, পরিবারের লোকজন দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, বলয়-বিভেদ সৃষ্টি এবং দল ভারী করতে হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে এসব অভিযোগ চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া কোথায় কোথায় জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব বেড়েছে তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিতদের জায়গায় খোঁজা হবে তরুণ, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অভিযুক্তদের আর মনোনয়ন দেবেন না দলীয় সভানেত্রী। কারণ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমর্যাদার প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে অনেকখানি নির্ভার থাকা যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঝুঁকি নেবে না দল।’

জাতীয় রাজনীতি