সীমাহীন উত্তাপ বিরাজ করছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন দামে রীতিমতো দিশেহারা সাধারণ ক্রেতারা। চড়া দামের ফলে প্রয়োজনের অর্ধেক পণ্যই কিনতে পারছেন না বেশিরভাগ ক্রেতা। এমনকি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে ভোগ্যপণ্যের অসহনীয় দামে ক্রেতা অসন্তোষ ঠেকেছে চরমে। সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে চাল, মুরগি, ডিম, আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম। এছাড়াও বোতলজাত ২ লিটার ও ১ লিটার তেলের সংকট রয়েছে বেশিরভাগ দোকানে। এদিন বাজারগুলোতে সব ধরনের চালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা। রেকর্ড ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে, ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে ডিমের ডজন, ২০ টাকা করে বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের কেজিতে, ৫০-১০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দামে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রায় ৫-৭ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ভালো মানের মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭৫-৭৮ টাকা এবং নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার ওপরে। এছাড়াও মোটা চালের কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা দরে। এদিকে বাজারে ভারতীয় চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও দেশি চালের তুলনায় দাম বাড়তি। এদিন আমদানিকৃত চিকন চালের (মিনিকেট) কেজি পাইকারিতেই বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, দেশি চালের তুলনায় আমদানিকৃত চালের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা বাড়তি দামে দেশি চাল না কিনে আমদানি করা চালই কিনছেন। অন্যদিকে আমদানিকৃত কাটারি চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৯২-৯৫ টাকা দরে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কল্যাণপুর নতুন বাজার, কারওয়ান বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। প্রয়োজনের প্রায় ৩ গুণ চাল মজুত রয়েছে এসব আড়তে। তবুও দাম বাড়তি। মোহাম্মদপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোরছালিন জানান, ভারতীয় চালের দাম দেশি চালের থেকে বেশি। ফলে বাজার দরে এর কোনো প্রভাব নেই। তবে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধিতে সব ধরনের চালের কেজিতে ৫-৬ টাকা দাম বাড়তি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে রাজধানীর বেশিরভাগ চাল আসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। প্রতি ট্রাকে পরিবহণ ব্যয় বেড়েছে ৬-৮ হাজার টাকা। যদি প্রতি ট্রাকে ৩০০ বস্তা চাল আনা হয় তাহলে প্রতি কেজি চালে বাড়তি খরচ পড়ে ১ থেকে দেড় টাকা। কিন্তু বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকার বেশি। যা পাড়া-মহলস্নার দোকানে বিক্রি হয় ৬-৭ টাকা বাড়তি দামে। চালের বাজারের এমন লাগামহীনতায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলেন, গত সপ্তাহের দামে এই সপ্তাহে অর্ধেক পণ্যেই কেনা যায়নি। এদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্যে কিনেই বাজার সেরেছেন বেশির ভাগ ক্রেতা। ট্রান্সকম কোম্পানির মোহাম্মদপুর জোনের ম্যানেজার মো. সায়েম বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে ১ বেলা খেয়ে বাঁচাটাই কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে বাড়িওয়ালা বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের স্কুল ও যাতায়াতের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেতন বাড়ছে না। আসলে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ নেই।’ আরেক ক্রেতা মো. সিদ্দীক বলেন, ‘কী বলব ভাই, ঈদের আগেও ২ হাজার টাকার বাজারে সপ্তাহ চলে যেত। কিন্তু আজ (শুক্রবার) ২ হাজার টাকায় তার অর্ধেক পণ্যই কিনতে পারিনি’। বিক্রেতারা বলছেন, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের ব্যবসার পুঁজি বাড়াতে হয়েছে কয়েক গুণ; কিন্তু বাড়েনি লাভের পরিমাণ। বিক্রেতা মোরছালিন জানান, আগে শুক্রবার খুচরা পর্যায়ে অন্তত ২৫-৩০ হাজার টাকার চাল বিক্রি হলেও এখন দাম বৃদ্ধির ফলে ১০ হাজার টাকার চালও বিক্রি হয় না। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে শুধু চাল নয়, রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে ডিম, মাংস, মাছ, আদা, রসুন ও পেঁয়াজসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম। শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকার ওপরে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫৫-৬০ টাকা দরে। প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে। এছাড়াও সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকার ওপরে। এদিন রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়ে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকার ওপরে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে সদ্য আমদানিকৃত আদা ও রসুনের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকার ওপরে। অন্য দিকে এ সপ্তাহে ফের ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলুও বিক্রি হয়েছে ৩৫ দরে। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের মাছের কেজিতে। এদিন আকার ভেদে রুই মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৩৮০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকার মধ্যে। কাতল মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা; পাবদা ও শিং মাছের কেজি বিক্রি হয়েছ ৫০০ টাকার ওপরে; বোয়াল ও আইড় মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৭০০ টাকা; হরিনা ও বাগদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকার ওপরে। এছাড়াও কেজিতে প্রায় ৩০-৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ২২০-২৫০, কৈ (বড়) ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে বাজারে ইলিশের ব্যাপক সরবরাহ থাকলেও দাম বাড়তির দিকে। এদিন ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০০-১৩০০ টাকা এবং ১০০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৫শ’ টাকার ওপরে। এদিকে এ সপ্তাহেও কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকার ওপরে। এছাড়া বেগুন, কচুর লতি, কাকরোল, করলস্নাসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা মধ্যে।