একটি–দুটি নয়—ফাঁস হয়েছে ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র। আর ফাঁসে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি একজন কেন্দ্রসচিব, যাঁর দায়িত্ব হলো নিরাপদে প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চলমান এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে। ঘটনাটি ধরা পড়ে গত মঙ্গলবার। এরপর গতকাল বুধবার চারটি বিষয়—গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা ও রসায়নের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বাকি দুই বিষয় উচ্চতর গণিত ও জীববিদ্যার পরীক্ষা নতুন প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে নির্ধারিত সময়েই নেওয়া হবে।
দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে এবার প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তাদের পরীক্ষার সূচিতে বিঘ্ন ঘটল। বোর্ডভেদে আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয় বলে দেশের অন্য বোর্ডের পরীক্ষা যথাসময়ে হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ভূরুঙ্গামারী থানায় মামলা হয়। মামলায় উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রের সচিব মো. লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক মো. জোবাইর হোসেন ও মো. আমিনুর রহমান, বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী মো. আবু হানিফসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন্দ্রসচিব লুৎফর রহমান এবং শিক্ষক জোবাইর হোসেন ও আমিনুরকে। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্রের ‘সেট’ (যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে) জানানো, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ইন্টারনেটের গতি কমানো ইত্যাদি। এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। কিন্তু দিনাজপুর বোর্ডের ঘটনায় দেখা গেল, পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে বলেন, ‘কাউকে না কাউকে দিয়ে তো কাজটি করাতে হবে। আমি কার ওপর বিশ্বাস রাখব।’ তিনি বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে কীভাবে কী হলো, দুর্বলতা কোথায় ছিল। পুলিশের তদন্ত চলছে।