ইভ্যালির বিপুল টাকার হদিস নেই

ইভ্যালির বিপুল টাকার হদিস নেই

 

প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন করেছে নগদে। বিপুল টাকার কোনো হদিস নেই।

ইভ্যালি নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এই অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না, যা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদন্তের বিষয়।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী ইভ্যালির ওপর এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী পর্ষদ। গত ৩১ আগস্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি ইভ্যালির পর্ষদের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। বলা হয়, একটি ভালো নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিপুল ছাড়ে পণ্য বিক্রির কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেল এখনো কারাগারে। তবে তাঁর স্ত্রী শামীমা গত এপ্রিল থেকে জামিনে রয়েছেন।

রাসেল কারাগারে যাওয়ার পর আদালত ইভ্যালি পরিচালনায় চার সদস্যের একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিলেন। ওই পর্ষদই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি করায়। এটি ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভ্যালির বাণিজ্যিক কার্যক্রম কোনোভাবেই টেকসই ছিল না। কোম্পানিটি মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে পরিচালিত হয়নি। সার্বিকভাবে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল ছিল। এটি শতভাগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়েছে, কোনো করপোরেট কাঠামো ছিল না।আদালত কর্তৃক গঠিত পরিচালনা পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা মাহবুব কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়, এমন অনেক তথ্যের অভাব ছিল। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তথ্যই ছিল না। তাই সার্ভারে (তথ্যভান্ডার) তথ্য ওঠাতে পারিনি। এ জন্য বিভিন্ন জায়গা চিঠিও দিয়েছিলাম। আমাদের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি ছিল না।’নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা, তথ্য সংরক্ষণ, লেনদেন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইভ্যালি যে লেনদেন করেছে, তার হিসাবেও গরমিল রয়েছে। লেনদেনের সঙ্গে নথির অসংগতি আছে। গরমিল আছে সরকারের শুল্ক-কর প্রদানের সঙ্গে হিসাব–নিকাশের মধ্যেও।

নিরীক্ষাকালে প্রতিষ্ঠানটির কাছে শুল্ক-কর, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন, মামলা-মোকদ্দমার তথ্য, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেন—এসব তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কোম্পানিটি পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছিল। কোম্পানিতে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার (সিএফও) পদ খালি ছিল। কর্মকর্তা ও কর্মীরা উচ্চ বেতনে চাকরি করলেও তাঁদের মধ্যে দায়িত্ববোধ দেখা যায়নি। তাঁদের কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলা হয়, ‘রাসেল স্যার সবকিছু জানেন, আমরা কিছু জানি না।’

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদনে লিখেছে, তারা ইভ্যালির ব্যবসা পরিচালনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চেয়েছিল। কিন্তু পায়নি। তাদের সার্বিক মত হলো প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় কৌশল ছিল খুবই দুর্বল।

রাসেল ও শামীমা ইভ্যালির ব্যবসা সম্প্রসারণ করলেও তাঁদের ততটা মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়, গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ইভ্যালি ব্যবসা করেছে। স্বল্পসংখ্যক গ্রাহককে পণ্য দিলেও বিপুলসংখ্যককে তা দিতে পারেনি।

‘তদন্ত চাই, টাকা চাই’

ইভ্যালিতে আদালতের নির্দেশে গঠিত পর্ষদ গত ১৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। এর আগে শামীমা তাঁর মালিকানার একটা অংশ তাঁর মা ও ভগ্নিপতিকে দেন। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে শামীমা, তাঁর মা ফরিদা আক্তার ও ভগ্নিপতি মামুনুর রশীদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী কামরুন নাহার ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনকে নিয়ে ইভ্যালির নতুন পর্যালোচনা পর্ষদ হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত জানতে শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে সম্ভব হয়নি।

বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এখনো ইভ্যালির কাছে টাকা পায়। পাওনার আসল পরিমাণ কত, তা জানা যায়নি। গ্রাহকদের কেউ কেউ এখন আশা করছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক প্রথম আলোকে বলেন, ইভ্যালির টাকা কই গেল, সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে। গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতীয়