সাহাদাত হোসেন পরশ, ওয়াকিল আহমেদ হিরন, ইন্দ্রজিৎ সরকার ও আতাউর রহমান
দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার পর ইতিহাসের আরেকটি দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে জাতি। বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ঘোষণা করেছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়। আর এ রায়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের জঘন্য এক কলঙ্ক থেকে মুক্তি মিলল দেশ ও জাতির।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলার এ রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইর তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ। এ ছাড়া এ মামলার আসামি পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শকসহ ১১ সরকারি কর্মকর্তাকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ দেওয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বর্বরোচিত এ হামলায় ২৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ম্ফোরক আইনের দুই মামলায় এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে নৃশংস এ হত্যাকাে র বিচার বিচারিক আদালতে শেষ হলো। অবসান ঘটল দীর্ঘ প্রতীক্ষার।
এদিকে, রায়কে ঘিরে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ছিল পুলিশ-র্যাবের সতর্ক প্রহরা। তবে রায় ঘোষণার পরপরই বগুড়ায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে যাত্রীবাহী একটি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসের সামনের আসনে থাকা তিন নারী যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। হামলাকারী একজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশের অন্য কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, তারেক রহমানের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
রায় ঘোষণার পর সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ হামলার মূল নায়ক তারেক রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সপাটে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের নায়ক ছিলেন। মূল হোতা তারেকের তাই মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল।’ তিনি জানান, রায়ের কাগজপত্র পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে তারেক রহমান, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও হারিছ চৌধুরীর সাজা ফাঁসিতে বর্ধিত করতে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, এ রায়ে উপযুক্ত বিচার হয়েছে। যারাই অপকর্ম করবে, তাদের শাস্তি হবে- রায়ের মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। আজকে জাতির জন্য বড় একটা দিন। জাতির আরেকটি কালিমা দূর হলো আজ।’
রায়ের পর বুধবার দুপুরে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিলম্বিত হলেও এ রায়ে অখুশি নই। কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্টও নই। কারণ, এ রায়ে প্ল্যানার এবং মাস্টারমাইন্ডের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট। তখন খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায়, বনানীর হাওয়া ভবন থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হতো। হাওয়া ভবনই বিকল্প পাওয়ার সেন্টার ছিল। মুফতি হান্নান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছে, অপারেশন চালানোর আগে তারেক রহমানের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল।’
রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি এ রায় প্রত্যাখ্যান করছে। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার এটি আরেকটি উদাহরণ। রায়ের প্রতিবাদে দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। রায়ে আর কারও ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল কি-না খতিয়ে দেখা হবে।
মৃত্যুদ প্রাপ্ত আসামি যারা :আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল রতন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দ বিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। অনাদায়ে আসামিদের আরও এক বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে যাদের ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের এই ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে না। একইভাবে ১৯০৮ সালের বিস্ম্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের (সংশোধনী-২০০২) ৩ ও ৬ ধারা এবং ৪ ও ৬ ধারায় আসামিদের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদে র সাজা ও ২০ বছরের সাজা একযোগে কার্যকর হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের হাজতবাসের সময় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী প্রদত্ত দণ্ডাদেশ থেকে বাদ যাবে বলেও আদেশ দেন আদালত।
আদালত রায়ে দণ্ডিতদের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দেন। এ ছাড়া এ মামলায় পলাতক ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আদেশ দেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, যে আসামিরা পালিয়ে আছেন, তারা যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন বা যেদিন তাদের গ্রেফতার করা হবে, সেদিন থেকেই তাদের দ সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি, এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজলসহ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। পুরো আদালত কক্ষ সাংবাদিক ও আইন-?শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে পূর্ণ ছিল।
যাবজ্জীবন কারাদ পেলেন যারা :যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদের দ বিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামি হলেন- পুলিশের সাবেক তিন আইজি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, ডিজিএফআইর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান। তাদের মধ্যে সাবেক আইজি খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানের প্রত্যেককে তিন বছর করে কারাদ, পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদ দেন আদালত। অন্যদের বিভিন্ন ধারায় দুই বছর করে কারাদ, পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদ দেওয়া হয়।
আদালতের দৃশ্যপট :রায় ঘিরে গতকাল সকাল থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের আশপাশের এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। পুরান ঢাকার সব সড়কে তিন স্তরে নিয়োজিত ছিল পুলিশ-র্যাবের সদস্য। পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালসংলগ্ন দোকানপাট সকাল থেকে ছিল বন্ধ। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ৩১ আসামিকে বহনকারী প্রিজনভ্যান ও গাড়ি রাখা হয় বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে। এরপর একে একে অন্য আসামিদেরও আদালতে আনা হয়। আদালতে উপস্থিত আসামিদের মধ্যে ১৯ জনকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নেওয়া হয়। ১১টা ৪০ মিনিটে বিচারক আদালতে আসেন। এরপর রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শুরুর এক মিনিট পরই আদালতে বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় পড়া শেষ হয়। রায় ঘোষণার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরসহ অনেকেই রায় প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বলেন, ‘ন্যায়বিচার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।’
রায়ে বিবেচ্য ১৪ বিষয় :রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে বিচারক ১৪টি বিষয় উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয়- ১. অভিন্ন অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে ষড়যন্ত্রমূলক সভা করতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি আহসান উল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া ফ্ল্যাটে অন্য আসামিরা একত্রিত হয়েছিল কি-না; ২. বাড্ডার আনন্দনগরে অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক রুহুল আমিনের বাসায় মুফতি হান্নান ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল কি-না; ৩. ওই বাড়ি থেকে মুফতি হান্নান ২০০৫ সালে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে কি-না; ৪. মেরুল বাড্ডায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে গ্রেনেড সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি-না; ৫. ধানমণ্ডিতে চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা বৈঠক করেছিল কি-না; ৬. ২০০৪ সালের ১৮ আগস্টের বৈঠকে গ্রেনেড প্রাপ্তি, অর্থবল, প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কি-না; ৭. আসামি আহসান উল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন ওরফে জান্দাল আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে মাওলানা তাজউদ্দিনের সরবরাহ করা ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও নগদ ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিল কি-না; ৮. ‘হাওয়া ভবন’ নামে পরিচিত গুলশান থানার ডি-ব্লকের ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটি বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোট সরকারের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কি-না; ৯. হাওয়া ভবনে পলাতক আসামি তারেক রহমান অপরাধ সংঘটনের জন্য সভা করেছিলেন কি-না; ১০. বিভিন্ন সময় জঙ্গি নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে সভায় মিলিত হয় কি-না; ১১. মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটে হুজিবির অফিসে জঙ্গিরা সভা করেছিল কি-না; ১২. পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে অবিস্ম্ফোরিত গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে আসামিদের অপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল কি-না; ১৩. প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে মিথ্যা, বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল কি-না; এবং ১৪. এসব ঘটনাস্থলে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও পূর্বপরিকল্পনা করে পরবর্তী সময়ে মূল ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগ কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিরা দণ্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯, ২০১, ২১২, ২১৭, ২১৮, ২৩০ ও ৩৪ ধারায় শাস্তি পাবে কি-না। রায়ে উঠে আসে- হামলার আগে বনানীর হাওয়া ভবন ও পিন্টুর ধানমণ্ডির সরকারি বাসায় একাধিকবার ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক হয়েছিল। সেখান থেকেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। হামলার ব্যাপারে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক, বাবর ও পিন্টু।
দুই পক্ষের কৌঁসুলিদের বক্তব্য :রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে- এ বক্তব্য আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছেন। প্রত্যাশা ছিল, আইনের বিধান অনুযায়ী যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়। প্রসিকিউশন টিমের সিদ্ধান্ত হলে প্রয়োজনে উচ্চতর আদালতে আপিল করা হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষ ও দেশের জনগণ অধীর আগ্রহে এ দুটি মামলার রায়ের অপেক্ষায় ছিল। সেই অপেক্ষার দিন যে শেষ হলো, এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আশা করেছিলাম। তারেক যে অপরাধ করেছেন, সে জন্য তাকে দু’বার যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে ফাঁসি চাওয়ার দরজা এখনও রুদ্ধ হয়নি। তাই অবশ্যই উচ্চতর আদালতে যাব।
তারেক রহমানসহ দণ্ডিত বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়নি। অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদ দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন এবং অবশ্যই আপিল করবেন।’