আগামী ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
ওইদিন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন থাকায় কর্মসূচি এগিয়ে আনার কথা ভাবছে দলটি।
একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, কর্মসূচি চূড়ান্তের আগে ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলনের কথা তাদের জানা ছিল না।
বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তারা কোনো বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই এখন যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে থাকা সমমনা ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। ২৪ ডিসেম্বরের আগে যে কোনো একদিন দেশব্যাপী গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কথা আসলে আমাদের জানা ছিল না। আমরা প্রত্যেক শনিবার কর্মসূচিগুলো পালন করে আসছি। দশটি গণসমাবেশ শনিবারই হয়েছে। তাই শনিবার হিসাব করেই আমরা গণমিছিলের কর্মসূচিটা ঘোষণা করেছি। আওয়ামী লীগ থেকে বলেছে, এখন আমরা বিবেচনা করব। আলাপ করে শিগগিরই আমরা জানাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির দিন বিএনপি সাধারণত কোনো কর্মসূচি দেয় না। যেহেতু তাদের ওইদিন জাতীয় সম্মেলন, তাই ওইদিনের কর্মসূচি পরিবর্তন করা যায় কিনা-তা বিবেচনা করা হচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ২৪ ডিসেম্বরের তারিখ পরিবর্তন করে এগিয়ে আনার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি সংঘাত চায় না। আওয়ামী লীগ সব সময় সংঘাত চেয়েছে। আমরা বিভাগীয় দশটি গণসমাবেশ করে প্রমাণ করেছি বিএনপি শান্তির পক্ষে। গত শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে ১০ দফা দাবিতে সমমনা ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একই সঙ্গে আরও ঘোষণা দেন, ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে যুগপৎ এ আন্দোলন। ওইদিন ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় হবে গণমিছিল। বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার দিনই দেশব্যাপী একই কর্মসূচি দেয় জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চসহ ২০ দলে থাকা সব রাজনৈতিক দলও যুগপৎ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক শান্তি সমাবেশে ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ওইদিন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। দুই মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। সেটি জানার পরও বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি দিয়ে দেশে গন্ডগোল বাধানোর চেষ্টা করছে।
সূত্রমতে, সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে একজন নেতার বক্তব্যে কর্মসূচির একইদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রসঙ্গ ওঠে। তিনি বলেন, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন রয়েছে। বিএনপি যেহেতু প্রতিহিংসা ও বিশৃঙ্খলার রাজনীতি করে না। তাই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। পরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা একমত হন-বিষয়টি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো দলের নীতিনির্ধারকরা কিছু জানাননি। তবে দল সিদ্ধান্ত নিলে দু-একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে জানানো হতে পারে।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না যুগান্তরকে বলেন, যেহেতু একইদিন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গণমিছিল কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। তাই ওইদিনের গণমিছিল কর্মসূচি পরিবর্তন করা উচিত। আমাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হলে তারিখ পরিবর্তনের কথাই বলব।