দেশে ডলারের সংকট কাটবে কত দিনে

দেশে ডলারের সংকট কাটবে কত দিনে

স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৩ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক লেনদেনে মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। তখন পর্যন্ত বিনিময় হার ওঠানামা করত পাউন্ডের বিপরীতে। এর পর থেকে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে পাউন্ডের পরিবর্তে বেছে নেয় ডলারকে। সেই শুরু ডলারের ওপর নির্ভরতা। সেই ডলারই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা। নানা সময়ে ডলারের আধিপত্য ভাঙা নিয়ে আলোচনা ও উদ্যোগ হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরও শক্তিশালী হয়েছে এই মার্কিন মুদ্রা। আর এই শক্তিশালী মুদ্রাই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে।

ডলার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের (ফেড) নিজস্ব মুদ্রা। ফেডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ডলারের দাম কোন দিকে যাবে। আমেরিকান মুদ্রা ডলার রাজত্ব করছে সারা বিশ্বে। তাই ডলারের দামের ওঠানামার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতি।

এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় লেনদেনের মাধ্যম ডলার। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈশ্বিক লেনদেন হয় এ মুদ্রায়। তাই ডলারই নির্ধারণ করে দেয় দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় গত বছরের মার্চ থেকে ডলারের সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। দেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় যা হয়, তার চেয়ে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এর ফলে ডলারের সংকট হয়ে দাম বেড়ে যায়, যার প্রভাবে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতিও।

ওই সময় অন্য দেশগুলো নিজেদের মুদ্রাকে অবমূল্যায়ন করে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তবে এ পথে না গিয়ে বাংলাদেশ টাকাকে শক্তিশালী করে রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিকই টাকা মান হারায়। যার ফলে সংকট আরও প্রকট হয়। ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। অনেকে মনে করেন, অর্থ পাচার ডলার-সংকটকে আরও উসকে দিয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ডলার-সংকট কাটবে কত দিনে। গত বছরের জুলাইয়ে যোগ দিয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, জানুয়ারিতেই কেটে যাবে সংকট। তবে সেই সংকট এখনো কাটেনি। এখন এই সংকট কাটাতে আর কোনো সময়সীমা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নানা উদ্যোগের কারণে চাহিদা কমছে, তাতে সামনে সংকট হয়তো আগের মতো তীব্র হবে না।

গত মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেছিলেন, মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর। এর মধ্য রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মেয়াদ ও তীব্রতা, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধি এবং চীনে করোনার নতুন প্রভাব ও তীব্রতার ওপর। যদি এসব পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও ভালো হবে। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে বা আরও খারাপ হলে দেশের অর্থনীতি আর খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ শুরু থেকে ডলারের দাম ধরে রেখে সংকট বাড়িয়েছে। এতে প্রবাসী আয় অবৈধ পথে চলে গেছে, রপ্তানি আয়ও অনেকে দেশে আনেনি। কিন্তু এতে কোনো উপকার হয়নি, ঠিকই আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পাচারও ঠেকানো যায়নি। এখন ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের ওপর চাপ কমতে পারে। কারণ, ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে অনেকে বিলাসপণ্য আমদানি করছে।

ডলারের দামের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির সম্পর্ক কেমন, তা এক প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান প্রথম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ। এক সহকর্মীকে নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফ ব্লগে গীতা গোপীনাথ লিখেছেন, ২০০০ সালের পর মার্কিন ডলার এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। পৃথিবীতে আন্তর্দেশীয় ও সংস্থার যত ঋণ রয়েছে, তার ৫০ শতাংশের বেশি ডলারে। আর বেসরকারি সংস্থা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঋণের প্রায় পুরোটাই ডলারে। ডলারের বিপরীতে কোনো দেশের মুদ্রা ১০ শতাংশ দাম হারালে মূল্যস্ফীতি বাড়ে ১ শতাংশ। তাই সদস্যভুক্ত দেশের লেনদেন ভারসাম্যে সহায়তা দিতে আইএমএফ সব সময় প্রস্তুত।

বাংলাদেশসহ আইএমএফের সদস্যভুক্ত দেশ ১৯০টি। ডলারের সংকটের কারণে বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যে যে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে ইতিমধ্যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ জন্য জুড়ে দিয়েছে নানা শর্ত।

বাংলাদেশে গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকা মান হারিয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ডিসেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য ৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ডলারের দামের পাশাপাশি আমদানি পণ্যের বাড়তি দাম মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। প্রসাধনী ব্যবহার্যের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে।

সবচেয়ে মূল্যবান কিন্তু নয়

ডলার সবচেয়ে শক্তিশালী ও ব্যবহৃত হলেও সবচেয়ে বেশি মূল্যবান মুদ্রা কুয়েতের দিনার। কুয়েতের ১ দিনারে পাওয়া যায় ৩ ডলারের বেশি। এরপরই মূল্যবান মুদ্রার তালিকায় রয়েছে বাহরাইনের দিনার, ওমানের রিয়াল, জর্ডানের দিনার, ব্রিটিশ পাউন্ড, জিব্রালটার পাউন্ড, কেম্যান আইল্যান্ডের ডলার, ইউরো ও সুইস ফ্রাঙ্ক।

এদিকে ডলারকে শক্তিশালী করতে ২০২০ সাল থেকে নানা উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশটি নাগরিকদের নগদ ডলার সহায়তা দেয়। ওই সময় অর্থনীতি ঠিক রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) ডলারের সরবরাহ বাড়ায়। ফলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডের মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশে। গত ডিসেম্বরে যা ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।

মূল্যস্ফীতি কমাতে গত বছর দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ায় ফেড। ফলে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ফেড। এখন ফেডে ডলার রেখে ভালো মুনাফা মিলছে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো বিদেশি বিনিয়োগপ্রত্যাশী দেশগুলো কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ পাচ্ছে না।

বিদেশি ব্যাংক থেকে ডলার ধার করার ক্ষেত্রে আগে সুদহার নির্ধারিত হতো লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার্ড রেট বা লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হারের (লাইবর) সঙ্গে মিল রেখে। এর পরিবর্তে এখন সিকিউরড ওভার নাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (সোফর) সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেড সাত দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে সোফরের রেটও বেড়েছে। যেমন ছয় মাস মেয়াদে সোফরের সুদহার এখন ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদ। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ পর্যন্ত খরচ ধরে থাকে। ফলে বিদেশি ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি খাত বিদেশি ব্যাংক ও অন্য উৎস থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তারও সুদ বেড়েছে। অথচ গত বছরের জুলাইয়ে ছয় মাস মেয়াদে সোফরের সুদহার ছিল দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ফলে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপর। এদিকে এখন যে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে, তার বড় অংশই বিলম্বে পরিশোধের। এতে সামনে সংকট কেটে যাওয়ার আশা করলেও কালো মেঘ রয়ে গেছে। কারণ, সরকারি-বেসরকারি খাতে ৯২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

দেশে ডলার-সংকট মেটাতে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে দেশে এখন প্রতি মাসে গড়ে যে পরিমাণ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আসছে, আমদানি খরচ হচ্ছে তার চেয়ে কম। এরপরও সংকট রয়ে গেছে। কারণ, আমদানির জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলো আগে যে অর্থায়ন করেছে, তার দায় এখন শোধ করতে হচ্ছে। এতে সুদও বেড়ে গেছে। আবার সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ পরিশোধ, বিদেশি কোম্পানির মুনাফা প্রত্যাবাসন, বিমানভাড়া, চিকিৎসাসেবাসহ নানা খরচ রয়েছে।

ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার এখন যারা ঋণপত্র খুলছে, তাদের বেশির ভাগ দায় পরিশোধে ছয় মাস পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। সুতরাং শিগগিরই সংকট কেটে যাবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে, এতে টাকার সংকটে পড়েছে অনেক ব্যাংক। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রাখায় আমানতের সুদও বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। তাতে কমছে ব্যাংক আমানতও। সংকটে পড়ে কোনো কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদেও অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করছে। ফলে অনেক মানুষ ব্যাংকবিমুখও হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি ডলার ১০২ টাকা দামে বিক্রি করছে। আর ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ১০৩ টাকায়। প্রবাসী আয় কিনছে ১০৭ টাকায়। ফলে আমদানিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০৫ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়নের কিছু বেশি। এর ৮ বিলিয়ন ডলার অবশ্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অথচ ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।

ডলারের মান বাড়ায় যেসব দেশ জ্বালানি তেল, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য এবং ধাতব পণ্য রপ্তানি করে, তারা ভালো অবস্থানে আছে। তাদের আয় বাড়ছে। অন্যদিকে আমদানিনির্ভর দেশগুলো পড়েছে বিপদে। সবারই আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। আমদানিকারক দেশগুলো বিদেশ থেকে মূল্যস্ফীতিও আমদানি করছে।

স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন পছন্দ করেন মূলত রপ্তানিকারকেরা। প্রবাস থেকে যাঁরা অর্থ পাঠান, তাঁরাও এ থেকে লাভবান হন। যেমন এক ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৮৫ থেকে ১০৭ টাকা বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে, অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ২২ টাকা। এতে রপ্তানিকারকেরা প্রতি ডলার আয় থেকে বাড়তি ২২ টাকা বেশি হাতে পাচ্ছেন। এতে রপ্তানি আয়ও বাড়ে।

অন্যদিকে আমদানি করতে হয় ডলার কিনে। ফলে আগের চেয়ে ২০ টাকা বেশি দিয়ে আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মূলত সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি হলে একটি দেশ মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে থাকে। বাংলাদেশে এখন চলতি হিসাবে রেকর্ড ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেননা বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা যত আয় করছে, তার চেয়ে ব্যয় হচ্ছে অনেক বেশি। তবে এ ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব পণ্য আমদানির জন্য ডলার খরচ হয়েছে, তার সব পণ্য দেশে এসেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সক্রিয় হতে হবে। আর যারা কম বা বেশি দামে পণ্য আমদানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে আয় পাঠাতে পারেন ও রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ পাচার যেন না হয়, তার শক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডলারের দাম ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে সংকট কেটে যাবে।

জাতীয়