বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলনের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজধানী, নগর, মহানগর এমন রাজনৈতিক কার্যক্রম এবার গাড়িয়ে একেবারে ইউনিয়নপর্যায়ে। নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে আগামী শনিবার সারা দেশের ইউনিয়নগুলোতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সমন্বয় করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। আগামী শনিবার আওয়ামী লীগের ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা দেশের ৪০ জেলায় যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। একই দিন সারা দেশে ইউনিয়নপর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সমাবেশ তৃণমূলে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এক দিন পর বৈঠক করে একই দিন ‘শান্তি সমাবেশ’ করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলের নেতারা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। নির্বাচনের আগে কোনো অপশক্তি যেন রাজনৈতিক মাঠে পানি ঘোলা করতে না পারে সেজন্য তৃণমূলপর্যায় থেকে সতর্ক থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে জিমিয়ে থাকা ইউনিয়নপর্যায়ের চাঙা করতে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে দলের এমন কৌশল ঠিক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে এই যোগাযোগ দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করবে। দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, মান-অভিমান দূর করে দলকে চাঙা করবে। দলকে গতিশীল করবে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে।
তিনি আরো বলেন, বিরোধীরা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবেন। তবে বিএনপির কার্যক্রমের একই দিনে আওয়ামী লীগের সমাবেশ কার্যক্রম পাল্টাপাল্টিতে নারাজ আমিনুল ইসলাম।
গত রবিবার সভা সূত্রে জানা গেছে, ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের প্রতিটি জেলার ইউনিয়নপর্যায়ে একযোগে ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দল। জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সমাবেশে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্ব বণ্টন অনুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। কুমিল্লা উত্তরে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনি এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ যাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুরে যাচ্ছেন কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। চট্টগ্রাম উত্তরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
কক্সবাজারে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, রাঙামাটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এবং বান্দরবানে অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শান্তি সমাবেশ উপলক্ষে লালমনিরহাটের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফুরা বেগম রুমি। রংপুর যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।
জয়পুরহাটে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। বগুড়ায় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। নওগাঁয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাখাওয়াত হোসেন শফিক।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান।
সিরাজগঞ্জে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান, পাবনায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা-ু, ঝিনাইদহে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, যশোরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মাগুরায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী।
নড়াইলের আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি-বিন-মর্তুজা, বাগেরহাটে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম মিলন, খুলনায় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝরনা।
বরগুনায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান, পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বরিশাল জেলায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান।
পিরোজপুরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম কবির রব্বানী চিনু, টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার, মানিকগঞ্জে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মুন্সীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, গাজীপুরে সভাপতিম-লীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, নরসিংদীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সানজিদা খানম।
রাজবাড়ীতে বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ফরিদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফারুক খান এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম। মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাহজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং শাহাবুদ্দিন ফরাজী।
শরীয়তপুরের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, জামালপুরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শেরপুরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও কেন্দ্রীয় সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং যাচ্ছেন।
এ ছাড়া যেসব জেলা এবং নগরের নাম উল্লেখ করা হয়নি সেসব জেলায় স্থানীয় নেতারা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়নপর্যায়ের শান্তি সমাবেশ আয়োজন করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।