প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। নির্বাচনে যারা জনগণের ভোট পাবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দেয়। বৈঠক শেষে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জল্পনার অবসান ঘটাবেন। বৈঠকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের গণসংযোগ বৃদ্ধি ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। রাত ৮টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নির্বাচন, চলমান রাজনীতি ছাড়াও বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনের সমালোচনা করে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আমাদের বন্ধু। তবে সবচেয়ে বড় বন্ধু জনগণ। এ জন্য দলের সব এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীকে জনগণের কাছে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়নের প্রচার করে মন জয়ের মাধ্যমে ভোট আদায় করতে হবে।’
বিএনপিসহ অন্যদের নির্বাচনে না আসার সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রতিটি আসনে বিকল্প বা ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে কেউ না এলেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের নির্বাচন খুবই স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জের। এ নির্বাচনে জিততে হলে জনগণের সমর্থন আদায় করতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।’
১২ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী : বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দল যাঁকে প্রার্থী করবে, এমপিদের তাঁকেই নির্বাচিত করতে হবে। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব শেখ হাসিনাকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এতে সমর্থন দেন সংসদ উপনেতা। এরপর এমপিদের কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।
বৈঠকে থাকা একাধিক এমপি জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কারও নাম নিয়ে আলোচনা হয়নি। ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিনই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন। তার আগে দলের প্রার্থী কে- তা জানার সম্ভাবনা কম।
অনির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক হয় কীভাবে : বৈঠকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সঙ্গে অতি বাম, অতি ডান ও বুদ্ধি বেচে খাওয়াদের কয়েকজন মিলেছে। মানবাধিকার নিয়ে আভাসে-ইঙ্গিতে অনেকেই নানা কথাবার্তা বলছে। এগুলো তাদের টালবাহানা। এদের অনেকের সঙ্গে অপশক্তির যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ‘অনির্বাচিত সরকার’ বলার চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত হলে বিএনপি কী? ওরা তো পুরোটাই অবৈধ একটা রাজনৈতিক দল। আসলে এই বুদ্ধি বেচে খাওয়ারা অনির্বাচিত সরকার আসার অপেক্ষায় রয়েছে; গাড়িতে পতাকা পাবে- এই আশায় বসে আছে।
কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বদিউল আলম মজুমদার শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি দখল করেছেন। এ নিয়ে প্রতিদিনই তাঁর শালা-শালির সঙ্গে মারামারি হয়। গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সুশাসন নিয়ে তিনি জ্ঞান দেন কোন যুক্তিতে? শাহ্দীন মালিক, তিনি তো স্বাধীন! স্বাধীন হয়ে গণতন্ত্রের ছবক দিচ্ছেন! দুই বছরের জন্য অনির্বাচিত সরকার আনার জ্ঞান দিচ্ছেন। অনির্বাচিত সরকার কীভাবে গণতান্ত্রিক হয়? এটা আবার কোন গণতন্ত্রের নমুনা!’
পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সরকার গঠনের ৫২ দিনের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহ সফলভাবে সামলেছি। হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলাও সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। হলি আর্টিসান নিয়ে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত টুইট করেছিলেন- বাংলাদেশ এটাকে সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষয় ছাড়াই সামাল দিয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশ নিয়েই সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এ সংকট ঘনীভূত হতো। সেটা আমি করতে দিইনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আঞ্চলিক শান্তি ও ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। উপমহাদেশের সংকটও বাড়বে।’
আন্দোলনের টাকা আসে কোথা থেকে :বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপির আন্দোলনে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে; কোথা থেকে পাচ্ছে? কে দেয়? এ বিষয়ে দলীয় সংসদ সদস্যসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে যাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে, তিনি নিজেই দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। আর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তো দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে সাজা খাটছেন। জেনারেলদের পকেট থেকে জন্ম নেওয়া অবৈধ দল বিএনপি। তারা আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয় কীভাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯ আসন পেয়েছিল। আগামী নির্বাচনে এর চেয়ে বেশি তারা আশা করে কীভাবে? কারণ, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ দেশের অনেক উন্নয়ন ও অগ্রগতি করেছে। আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসন তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সরকার হটাতে আন্দোলনের নামে সারাদেশে আবারও সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।