উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারো দেশবাসীর প্রতি নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই জনগণ নৌকায় ভোট দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে বাংলাদেশের জনগণের জীবনে লেগেছে নিশ্চয়ই আজকে তাঁরা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য যে মেগা প্রজেক্টগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ দেবে এবং এজন্য আরো কিছু সময় আমাদের প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে স্বাধীন, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তারা অভিযান চালাচ্ছে এবং ইনশাআল্লাহ আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
তিনি আজ দশম জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায় সেজন্য প্রতিটি গ্রামকে তাঁর সরকার শহর হিসেবে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে সেটা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।
সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছি ২০২৪ সাল পর্যন্ত যদি আমরা উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে পারি তাহলে জাতিসংঘের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের স্থায়ী স্বীকৃতিও পেয়ে যাবো। তার জন্য সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা।
সরকার প্রধান বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা এজন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলোও আমাদেরকে সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তা এখন দৃশ্যমান। দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় দারিদ্র্যের হার ১৮ ভাগ, আমরা তার থেকেও দারিদ্র্যের হারকে কমিয়ে আনতে চাই। আমরা যদি ১৬-১৭ ভাগের নামিয়ে আনতে পারি তাহলে আমরা নিজেকে দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবো।
তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা তা করতে পারবো, যদি বাংলাদেশের জনগণ ভোট দেয় এবং আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করবো।’
এ সময় পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে আগামীতে ব্লু-ইকোনমির বাস্তবায়ন ঘটানোর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেন, ‘যদি আপনারা আমাদের ভোট দেন, আবার সেবা করার সুযোগ দেন, এ বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না।’
জাতির পিতার ভাষণের সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি ’আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কন্ঠ মিলিয়ে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অবশ্যই সক্ষম হব।
তিনি এ সময় শতবর্ষ মেয়াদি তাঁর সরকার গৃহিত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ এরও উল্লেখ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই তাঁর সরকারের এই পরিকল্পনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং তাঁর সরকারের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক আমরা সৃষ্টি করেছি।
তিনি এসময় ঢাকা থেকে দ্রুত দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে বরগুনা-পায়রা বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে যাবার জন্য দ্রুতগামী ট্রেন প্রতিষ্ঠাসহ সড়ক পথ এবং নদীগুলোকে ড্রেজিং করে নদীগুলোকে সচল করা, যাতে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুললে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজ হয় তা তাঁরসরকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ইতোমধ্যে দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে এবং জনগণের মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে । মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং নি¤œ মূল্যস্ফীতি এই অর্থনীতির সুফল গ্রামের তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আজকে গ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রায় সেজন্য পরিবর্তন এসেছে, তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমান প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার স্কুলকে জাতীয়করণ করে যান। আর তাঁর সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে। সেই সাথে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ এবং স্কুলকে সরকারিকরণ করে, যা অন্য কোন সরকার করেনি।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের এই অধিবেশনটি শেষ অধিবেশন হতে যাচ্ছে। যদি কোন দুর্ঘটনা বা দুর্বিপাক না ঘটে এটাই হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন।
তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো মজবুত হয়েছে। সংসদ সম্পর্কে মানুষের মনে যে বিরূপ ধারণা ছিল, তা দূর হয়েছে।
এই সংসদে কোন খিস্তী-খেইর নয় বরং সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকায় বিরোধীদলের প্রশংসা করেন তিনি।
পরিশেষে জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার পংক্তির আলোকে তিনি পুনরায় এ সংসদে ফিরে আসারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ