নিজস্ব প্রতিবেদক
আসছে রমজান মাস, ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়ছে। তবে এ বছর বাজারকে আরও বেশি অশান্ত করে তুলছে ডলার সংকট। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে ব্যাংকে ধরনা দিলেও মিলছে না ডলার। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, রমজানের বাজার এবার পড়েছে ডলারের চ্যালেঞ্জে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহজনিত সংকট রয়েছে। পণ্যের দামের পাশাপাশি বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। গ্যাস সংকটের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও। এ পরিস্থিতিতে ডলারের সংকট বড় বেশি চাপ সৃষ্টি করেছে বাজার পরিস্থিতির ওপর।
নিত্যপণ্য আমদানিতে ডলারের কোটা রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ব্যবসায়িরা। রোজায় পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠিও পাঠিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে সামগ্রিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এফবিসিসিআইয়ের সভাতেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকে ডলারের অভাবে আমদানি করতে পারছেন না।
ডলারের সংকট নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান জানান, দেশীয় বাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আসছে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম গত রমজানের তুলনায় ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে।
ডলার সংকট নিত্যপণ্যের আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে এলসি খোলার হার কমেছে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া এলসি নিষ্পত্তির হারও ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স সভার জন্য তৈরি করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৪৫ মেট্রিক টন চিনি আমদানি কমেছে। একই সময়ে ক্রুড পাম অয়েল আমদানি কমেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন, ছোলা আমদানি কমেছে ১৪ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন। তবে গত কয়েকদিনে ভারত থেকে চিনি ও ছোলা আমদানি বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, দু-চারটি বাদে বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখায় এলসি নিচ্ছে না। কয়েকটি ব্যাংক এলসি নিলেও শতভাগ মার্জিন রাখছে। ঋণপত্র খোলার সময় ডলারের দাম পুরোটা পরিশোধের পর ব্যাংকগুলো বলে দিচ্ছে- এলসি নিষ্পত্তির সময় যে দাম হবে, সেই দাম পরিশোধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর এই শর্তের কারণে এবার ডলারের দামই রমজানের বাজারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করছেন খাতুনগঞ্জের এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, রমজানের বাজার নিয়ে সর্বশেষ কথা হচ্ছে- ডলারের দাম বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে, আর ডলারের দাম কমলে পণ্যের দামও কমবে।