আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ অনুপ্রবেশকারী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা হচ্ছে

আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ অনুপ্রবেশকারী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা হচ্ছে

বিএনপি-জামায়াত, রাজাকার-আলবদরের সন্তান, ছাত্রদল ও শিবিরের প্রচুর নেতাকর্মী গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। দলীয় একশ্রেণির নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তারা অনুপ্রবেশ করেছেন। আর অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই ইয়াবা ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত আসামি। সম্প্রতি মোটা অঙ্কের টাকায় ছাত্রলীগের পদ ভাগিয়ে নেওয়া অনুপ্রবেশকারী রাজাকার, আলবদর ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, দখলবাজি, আটক করে নির্যাতনসহ নানা ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

 

এসব অনুপ্রবেশকারী তাদের অবৈধ আয়ের ভাগ প্রতি মাসেই সেসব নেতাদের নির্ধারিত হারে দিয়ে আসছেন, যাদের মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোতে ঢুকেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। দলের দুর্নাম সৃষ্টিকারী এসব অনুপ্রবেশকারী এবং যাদের হাত ধরে তারা দলে ঢুকেছেন, সেই সঙ্গে এসব অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের তালিকা হচ্ছে। আর এই তালিকা তৈরির কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

ছাত্রলীগ

আওয়ামী লীগের একশ্রেণির নেতাদের মাধ্যমেই দলের মধ্যেও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দলীয় সতর্ক অবস্থান থাকলেও অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে এবং এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত। এই অনুপ্রবেশের কারণ কী—সেটাও দলের নেতাদের কাছে চিহ্নিত এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দল থেকে বারবার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে। টানা ১৪ বছর দল ক্ষমতায় থাকার কারণে সুবিধাবাদীরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে অনুপ্রবেশ করছেন। সুবিধাবাদীরা যাতে দলে ঢুকতে না পারেন—সে জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন। তারপরও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে এবং তাদের দ্বারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ একের পর এক ঘটনা ঘটছে, যার দায় সরকার এবং আওয়ামী লীগের ওপর এসে পড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দলে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

সারা দেশে গত ১৪ বছরে লক্ষাধিক জামায়াত-শিবির, রাজাকার-আলবদর ও তাদের সন্তান এবং বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থক আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যোগদান করেছেন। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে জমি দখল, হত্যা মামলা, ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় তারা চিহ্নিত। অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আগামী নির্বাচনে জনগণ থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন করার টার্গেট নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় এক শ্রেণীর জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে জামায়াত-শিবির, রাজাকার-আলবদর ও তাদের সন্তান এবং বিএনপির-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়েছেন। মাঠ এখন হাইব্রিডদের দখলে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে অনেক আগে থেকেই সরব আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দলছুটরা ক্ষমতাসীন দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে ঢুকে পড়েছে—এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব অনুপ্রবেশকারীর কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের আশঙ্কা করছিলেন সব সময়। দলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরামেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূল পর্যায়ে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে কিংবা কেউ কেউ ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদও কিনে নিয়েছেন। তারা সরকারি দলে থেকে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। দল ক্ষমতায় না থাকলে তারাও থাকবেন না। সম্প্রতি এক জন জনপ্রতিনিধি ৩০ জন শিবির নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ঢুকিয়েছেন। এসব অনুপ্রবেশকারী থানায় গিয়ে আওয়ামী লীগে থাকার সুবিধা ভোগ করেন। ইতিমধ্যে তাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবে স্থানীয় এক প্রতিনিধি দলীয় কর্মী হিসেবে তাদের ছেড়ে দিতে তদবির করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো কোনো থানার ওসি মামলা কিংবা জিডি করতে গেলে জিগ্যেস করেন, আপনি কোন দল করেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হলে এক ব্যবস্থা, আর অন্য দল হলে অন্য ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়, অন্য দলের হলে মামলাই নিতে চায় না।

অভিজ্ঞজনদের মতে, বর্তমান সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু সব অর্জন ম্লান হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের অপকর্মের কারণে। এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে।

 

রাজনীতি