সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডিম আর মাংসের দাম। লাগামছাড়া দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে ডিম ও গোশত খাওয়া বাদ দিয়েছেন। নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। যারা কিনতে পারছেন, তারাও পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যারা ডজন ডজন ডিম কিনতেন এখন তারা হালিতে নেমেছেন। গরু কিংবা খাসির গোশত খাওয়া তো অনেকে ভুলেই গেছেন। ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি দিয়ে যারা আমিসের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতেন তারাও এখন পড়েছেন বিপাকে।
রমজান শুরুর আগেই এভাবে ডিম ও গোশতের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধু ডিম আর গোশতই নয়, বর্তমানে রাজধানীর প্রতিটি কাঁচাবাজারে সব ধরনের সাক-সবজিও আগের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ও আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
লাগামহীন দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। গত মাসেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ এ সময়ে দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। আর শেষ দফায় গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তখন দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন পর যারা ব্রয়লার মুরগি কিনতে বাজার এসেছেন তারা পিলে চমকে যাচ্ছেন। বিপাকে পড়ছেন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম নিয়েও। কারণ প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে। প্রতি হালি ৫০ টাকা, যা আগে ৪৫ টাকা ছিল। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার সাথে সাথে লেয়ার বা পাকিস্তানি জাতের মুরগির দামও কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২৮০ টাকায় পাকিস্তানি মুরগি পাওয়া গেলেও এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ও ডিমের মতো বাড়তি দেখা গেছে গরুর মাংসের দাম। বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় মিলতো। আর খাসির গোশত এখন ১০৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না রাজধানীর কোনো বাজারে। বকরি ৯৫০ টাকা। আগে যেখানে বকরি ৮০০ ও খাসির গোশত ৯০০ টাকায় পাওয়া যেত।
ক্রমাগত পণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতাকে দাম শুনে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
রামপুরা কাঁচাবাজারে জামাল উদ্দিন আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, দুদিন আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ২২৫ টাকা! মাসখানেক আগে কিনতাম ১৫০ টাকা। এরমধ্যে কী হলো যে দাম শুধু হু হু করে বাড়ছে।
তিনি বলেন, এভাবে আমাদের জীবন চালানো সম্ভব না। কোনোভাবেই হিসাবের মধ্যে সংসার চালানো যাচ্ছে না। মাছ-মাংস খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিতে হয়েছে।
এদিকে বিক্রেতারাও মুরগি ও ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ার কোনো সঠিক কারণ বলতে পারছেন না। মালিবাগ বাজারে মুরগি বিক্রেতা শামসুজ্জামান বলেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি শুধু এটুকুই জানি। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়ুক আমরা সেটা চাই না। কারণ দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল, মালিবাগ ও রামপরা বাজার ঘুরে গরুর মাংসের দামও বাড়তি দেখা গেছে। মাংস বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, কম দামে গরু কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগের দামে মাংস বিক্রি করে পরতা হচ্ছে না। সবখানে দাম বেড়েছে। তবে সেখানে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের সরকার গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাই আগেই এরা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে সবজির দামও কিন্তু খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রীষ্মের নতুন সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কমে আসায় শীতের সবজির দামও বাড়ছে। পেঁপে ও মুলা ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। আর গ্রীষ্মের নতুন পটল, বরবটি, করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে।