মৌসুম নয় ও সরবরাহ কম এ দুই অজুহাতে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম এখন বাড়তি যাচ্ছে। বাড়তি এই দামে সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বিক্রেতারা নির্বিকার বলছেন শীত শেষে সবজির দাম প্রতিবারই বারে। আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলেও ক্রেতাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে শিম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা আর বিচিসহ শিম ৬০ টাকা, প্রতি কেজি করোলা ১২০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, নতুন আলু (লাল) প্রতি কেজি ৪০ টাকা, নতুন আলু (ডায়মন্ড) প্রতি কেজি ৩০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, শীত এলে সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেই যে দাম বাড়ল, আর কমেনি। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি দামেই সবজি কিনতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলেই বিক্রেতারা বলে সরবরাহ কম, বাড়তি দাম, পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাদের একই রকমের অভিযোগ সব সময়। যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে বাজারে দাম বেড়ে যায় কিন্তু বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ দেখি না।
ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোখলেছুর রহমান বলেন, শীতে সবজির দাম কম থাকে এরপর মৌসুমি সবজির উৎপাদন, সরবরাহ কমে আসে, ফলে দাম বাড়ে। এখন দাম কিছুটা বেশি। আমরা পাইকারি বাজারে যখন যেই রেটে মাল পাই, পরিবহন খরচসহ কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করি। তাই যখন আমরা কম দামে কিনতে পারব, তখন কমেই বিক্রি করব।
কিছু কিছু সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি- এ বিষয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার সবজি বিক্রেতা রুবেল মিয়া বলেন, এখন মৌসুম না যেসব সবজির সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি। কারণ এই সময়ে এসে ওইসব সবজির উৎপাদন বা সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে রমজান মাসের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়তে পারে সব মাছের দাম।সামনে যদি দাম আরও বেড়ে যায় তাহলে তো আর মাছের বাজারে আসতেই পারবেন না মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর হাতিরপুল ও পশ্চিম রাজাবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাতল মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, রুই মাছ আকার ভেদে ৩০০-৩৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, মলা মাছ আকার অনুযায়ী ৪০০-৫০০ টাকা, শোল মাছ আকার অনুযায়ী ৬০০-৮০০ টাকা, পাঙাশ মাছ ২০০ টাকা, কই মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা ও কালিবাউস ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাংসের বাজারে মধ্যবিত্তের যাওয়ায় মানা। মোটা চাল, মৌসুমের কমদামি সবজি, পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছ কিংবা ব্রয়লার মুরগি-এসব পণ্য কিনতে গিয়েও স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। কারণ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। শীত শেষ হওয়ায় মৌসুমি সবজিও বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। তেলাপিয়া-পাঙাশের মতো চাষের মাছের কেজিও হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা। এছাড়া কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গিয়েছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবুল হোসেন বলেন, আগে গরিব মানুষ যা খেতো, সেগুলোর দাম বাড়তো কম। এখন সেগুলোর দামই তরতর করে বাড়ছে। দেশে যেন নৈরাজ্য চলছে। বাজারভরা জিনিস কিন্তু দামের চোটে কোনো কিছুই কেনা যাচ্ছে না।
চাল বিক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু মোটা চালের দাম দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে।