ইউপি নির্বাচন সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ!

ইউপি নির্বাচন সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ!

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপী (বিএল) চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট না দেখেই ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করেছেন রির্টানিং কর্মকর্তা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গোবরা ইউনিয়নে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হবে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন ।

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির কদর ১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৪ টাকার ঋণখেলাপী বলে সিআইবি রির্পোট থেকে জানা গেছে ।

সিআইবি’র ওই রিপোর্টে দেখাগেছে, মোট ৫টি ব্যাংক হিসাবে ওই প্রার্থী উল্লেখিত পরিমাণ টাকার ঋণখেলাপী (বিএল) হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সিআইবি সাবজেক্ট কোড নং এ ০০০২৭৩০৭৬ তে ৪ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ৪৬৬ টাকা, সিআইবি সাবজেক্ট কোড নং এক্স ০০০০৮৪৪০৬২ তে ৩৮ লাখ ৪৮৮ টাকা, ওই কোডে ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৫ টাকা ও ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮২ টাকা ঋণখেলাপী হয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে সিআইবি সাবজেক্ট কোড নং জি ০০০০২১৩৫৭৬ তে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৩ টাকার ঋণখেলাপী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির ।

গোবরা ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী সফিকুর রহমান চৌধূরী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই ও বাছাইয়ের সময় সিআইবি রিপোর্ট চাইতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মোতাবেক রির্টানিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রার্থীর সিআইবি রিপোর্ট দেখবেন। প্রাপ্ত সিআইবি তথ্যের ভিত্তিতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বৈধ বা অবৈধ ঘোষনা করবেন। শুনেছি চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির খেলাপী ঋণের তথ্য গোপন করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মানোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কমকর্তা মনোনয়পত্র যাচাই বাছাইয়ের সময় ওই প্রার্থীর সিআইবি রিপোর্ট না দেখেই তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঋণখেলাপী ফয়সলের ঢাকায় কার ম্যাক্স, গান ম্যাক্স, মুনভিউসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গাড়ি ইমপোর্ট করার জন্য তিনি সোনালী, বেসিক ও এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। পরে ঋণের দায়ে ব্যাংক তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান কার ম্যাক্স সিলগালা করে দেয়। এছাড়া মুন ভিউ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফয়সাল প্রপার্টিজ, প্রমোটার ও ডেভেলপারের ব্যবসা করছেন। তিনি অনেক টাকা খরচ করে এনআইডি কার্ড ও টিন নম্বরে কারসাজি করেছেন। এই নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের সময় তিনি কারসাজি করা এনআইডি ও টিন নম্বর জমা দিয়েছেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির কদর বলেন, আমি কোন তথ্য গোপন করে প্রার্থী হইনি। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার আইডিকার্ড নম্বর, টিন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই দাখিল করেছি। ২০ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ে আমার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার বৈধ ঘোষনা করেছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার সিআইবি প্রতিবেদন কোন প্রার্থীর কাছে চান নি। আমি ঋণখেলাপী হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে ব্যাংক রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করত। সেই সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করার ক্ষমতা কারো নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও গোবরা ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার শেখ বদরুদ্দিন বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি গোবরা ইউনিয়নের প্রার্থীরা মানোনয়নপত্র দাখিল করেন। ওই দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আমরা সিআইবি রিপোর্টের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর কাছে প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠাই। পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ দিকে প্রার্থীদের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করি। এই কাজ শেষ হওয়ার পর দুপুর ২ টার দিকে সিআইবি রিপোর্ট আমি হাতে পাই। ততক্ষণে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রার্থীর ঋণখোলাপীর বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেউ আপিল করেন নি। তাই এখন আর ওই মনোনয়নপত্র বাতিলের সুযোগ নেই।

গোপালগঞ্জের আইনজীবী বিজন বিশ্বাস বলেন, ঋণখেলাপী কোন ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না। তারপরও যদি কেউ প্রার্থী হন, তা হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ঋণখেলাপীর বিষয়ে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন এটি আমলে না নিলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

সারাদেশ