নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সারাদেশে নির্বাচনী জরিপ করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান জরিপ সংস্থা এবং সংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগে এইসব জরিপ পরিচালিত হচ্ছে। একাধিক জরিপ সংস্থা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী জরিপ হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় নির্বাচনে কোনো কোনো দলের কি অবস্থান এই রকম একটি সার্বিক জরিপ হচ্ছে ছয় মাস পর পর। সম্প্রতি এই তৃতীয় জরিপটি শেষ হয়েছে এবং তৃতীয় জরিপের ফলাফল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক জরিপ ছাড়াও বিভিন্ন আসনভিত্তিক জরিপ করা হচ্ছে, জনগণের বিভিন্ন বিষয়ে মনোভাব জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি বিকল্প প্রার্থীদের সম্পর্কেও জনগণের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তবে সর্বশেষ সার্বিক জরিপে আওয়ামী লীগের এমপি এবং মন্ত্রীদের জন্য এক ধরনের দুঃসংবাদই রয়েছে। তৃতীয় দফার এই জরিপ শুরু হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এর প্রাথমিক খসড়া রিপোর্ট জানুয়ারি মাসে শেষ হয়। এটি এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তৃতীয় জরিপে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি একই প্রার্থী বহাল থাকে তাহলে বর্তমান মন্ত্রিসভার অন্তত ১২ জন মন্ত্রীর শোচনীয় ভরাডুবি হবে। এই মন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান খুঁইয়েছেন এবং কোনো ভাবে তারা জয়ী হয়ে আসতে পারবেন না বলে জরিপের তথ্যে উঠে এসেছে। এই সমস্ত মন্ত্রীদের মধ্যে অন্তত তিনজন প্রভাবশালী হেভিওয়েট মন্ত্রী রয়েছেন। যারা গত কয়েকটি নির্বাচনে দাপট দেখিয়ে ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। জরিপের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, এই ১২ জন মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় অন্তত ৮৭ জন এমপির অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। তাদের জন্য আগামী নির্বাচনে জিতে আসা কঠিন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন আগামী নির্বাচন হবে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। কেউ কারও ওপর ভর করে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেনা বলে প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় দলের বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এটাও তিনি বলেছেন যে, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং যাদের রিপোর্ট ভালো হবে না তাদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যে ১২ জন মন্ত্রী কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন অর্থাৎ যারা আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে তাদের বিকল্প প্রার্থী ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এদের মধ্যে মাত্র একজনের আসন বদল হতে পারে। বাকিদের মধ্যে অন্তত সাতজন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আর বাকিদেরকে এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তার অবস্থা কি তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। যদি শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে, তাদের এলাকায় অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তারা শেষ মুহূর্তে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন তবে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের জরিপে যে ৮৭ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের অবস্থা ভালো না বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে তাদের মধ্যে অধিকাংশই গত তিনটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া। এদের মধ্যে কয়েক জন প্রথমবারের মতো গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ৮৭ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে অন্তত তিনজন এমপি আছেন যারা আগামী নির্বাচনে কালো তালিকা তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এই জরিপটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে এরকম অন্তত আরও দুটি সার্বিক জরিপ করবে এবং তারপরই মনোনয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।