সংলাপে সমাধান মেলেনি আন্দোলনে ঐক্যফ্রন্ট

দ্বিতীয় দফা সংলাপেও সমাধান না আসায় আন্দোলন জোরদার করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে সংলাপ ফলপ্রসূ না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এমন ঘোষণা দিয়েছেন। জোট সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্তভাবে সংলাপ ব্যর্থ হলে সাত দফা দাবিতে পর্যায়ক্রমে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে ঐক্যফ্রন্ট। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার মরণপণ চেষ্টা করবেন তারা। তবে চূড়ান্ত আন্দোলন হবে খুব অল্প সময়ের। বহুল আলোচিত সংলাপে ইতিবাচক

ফল না আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশবাসীও হতাশ। এ নিয়ে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফার এ সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রস্তাবিত ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা’ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবে সংসদ ভেঙে সরকারের মেয়াদপূর্তির পরের ৯০ দিনে ভোট করার কথা বলা হয়েছে। তারা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায়। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একজন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ উপদেষ্টা নিয়োগ করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতে অশুভ শক্তি আসার সুযোগ তৈরি হবে। কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষ। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালে আলোচনা হতে পারে। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তারা দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। বল এখন সরকারের কোর্টে। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাবেন তারা। একইসঙ্গে সরকারকে ‘সতর্ক’ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাঙ্কুয়েট হলে সকাল ১১টায় শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা চলে এই সংলাপ। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমসংখ্যক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

সংলাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গতকালের সংলাপে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বক্তব্যের জবাবে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। সূচনা বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুরো সংলাপেই ঐক্যফ্রন্ট ও ১৪ দলের সিনিয়র নেতারা যার যার অবস্থানে থেকে সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে যুক্তিতর্ক তুলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। তবে প্রথম সংলাপে দুই জোটের কয়েকজন নেতা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিলেও গতকালের সংলাপে ‘সংযত’ ছিলেন দু’পক্ষের নেতারাই। সংলাপের শুরুতে এক হাজার ৪৬টি ‘রাজনৈতিক মামলা’র তালিকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তুলে দেন মির্জা ফখরুল। সংলাপে খাবারের তালিকায় ছিল চা, কফি, বিস্কুট, কেক, বাদাম, কয়েক ধরনের ফলের জুস, কোমল পানীয় প্রভৃতি।

সূত্র জানায়, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা’ নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদ ভেঙে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে অশুভ শক্তি আসার সুযোগ তৈরি হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনির্বাচিত কাউকে নির্বাচনকালীন সরকারে নেওয়া যাবে না। ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।’

সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা দেশে একটি গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ চান। এ লক্ষ্যেই তারা সংলাপে যোগ দিয়েছেন। তারা আশা করেন, সরকার সংলাপে উত্থাপিত সাত দফা বিবেচনা করবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধানের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রয়েছে। আবার সংবিধান সংশোধন করাও সংবিধানের বিধান। প্রধানমন্ত্রীকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে বিশেষভাবে আহ্বান জানান ড. কামাল।

ঐক্যফ্রন্ট উত্থাপিত ফর্মুলায় ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের রূপরেখায়’ চারটি প্রস্তাব করা হয়। এক নম্বরে ‘নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া’ এবং চার নম্বরে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে’র ফর্মুলা তুলে ধরা হয়। সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুযায়ী নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার কথা বলা হয়। বিভিন্ন দেশের সাংবিধানিক রীতি অনুসারে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য প্রায় ৪৫ দিন ব্যবধান থাকা বাঞ্ছনীয়। চার নম্বর প্রস্তাবে কার্যত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে একজন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন’ করার ফর্মুলা দেওয়া হয়। দুই নম্বর প্রস্তাবে ছিল ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন’। তিন নম্বর ছিল ‘নির্বাচন কমিশনের সমতলভূমি’ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, জামিনের বিরোধিতা না করা, নতুন মামলা দায়ের না করা, মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব।

সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

ওবায়দুল কাদের যা বললেন :সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষ, তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালে আলোচনা হতে পারে। তিনি জানান, সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্বাচন পিছিয়ে সরকারের মেয়াদপূর্তির পরের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার দাবি তুলেছেন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে এমন দাবি মেনে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁকফোকর হয়তো খুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান-ইলেভেনের মতো সেই অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। আমরা সবাই সেটাই মনে করছি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। পরিস্কার করে বলে দিয়েছি, এটা মেনে নেওয়ার মতো সংবিধানসম্মত কোনো কারণ নেই। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু হবে না।

ঐক্যফ্রন্টের ‘নির্বাচনকালীন সরকার’-এর দাবি নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার, অর্থাৎ ২৭/২৮ জানুয়ারির আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট সরকারের মেয়াদ শেষে পরের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং দশজন উপদেষ্টাকে নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’-এর অধীনে ওই নির্বাচন হতে হবে। ওই প্রস্তাব আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, হয়তো তাদের অনেকের একটা সদিচ্ছা আছে। কিন্তু এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। আমাদের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী তাদের নেতাদের অনুরোধ করেছেন, ‘আপনারা আসেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করি। দেখিয়ে দেব, আমি যা বলেছি সেটা সত্যি। আমরা দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক অভিসন্ধি নিয়ে কাজ করি না।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয়, আমি থাকব। আপনারা জিতলে আপনারা জিতবেন। নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি, জালিয়াতি হবে না। একটা ভালো নির্বাচন হবে… ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে, ক্রেডিবল ইলেকশন হবে, অ্যাকসেপটেবল ইলেকশন হবে।’

সংলাপের পরও প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আলাদাভাবে একই কথা বলেছেন বলে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশনের ব্যাপারে সহযোগিতা করুন। আজ নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে ফাঁকফোকর গলে কোনো অপশক্তিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেবেন না। যেটা আপনাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, আমাদের সবার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মন খুলে কথা বলেছেন। তারা তাদের সাত দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পরিদর্শনের অনুমতি এবং সত্যিকারের রাজনৈতিক মামলা থাকলে তা প্রত্যাহারের মতো কয়েকটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ একমত হয়েছে। সাত দফার বেশির ভাগ মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশন থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। মন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেবেন না; সরকারি গাড়ি, পতাকা এবং সার্কিট হাউস ব্যবহার করবেন না। বর্তমান এমপিরাও কোনো সুযোগ-সুবিধা নেবেন না। নির্বাচনের মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা যেসব সুবিধা পাবেন, আমরাও সেটাই পাব।

নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনে ঐক্যফ্রন্টের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের নিয়ম নেই। তবে নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। সত্যিকারের রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং প্রধানমন্ত্রী বিএনপির পাঠানো তালিকা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে, সেটিতে বিএনপি সিরিয়াস থাকলে এই মামলা এত প্রলম্বিত হতো না, রায় দিতেও দেরি হতো না। সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তি ওইভাবে তারা চাননি, জামিন চেয়েছেন। আদালত জামিন দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশাবাদী। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছেন, এটি নজিরবিহীন। আমি তো মনে করি, সংলাপে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনার টেবিলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়নি।

সংলাপ ব্যর্থ হলে ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা পদযাত্রা করবে, রোডমার্চ করবে- এগুলো তো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। তবে এগুলোর নামে কোনো জ্বালাও-পোড়াও ও বিশৃঙ্খলা করলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না।

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যা বললেন :সাত দফা নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সমঝোতা না হলেও জোটের নেতারা এখনই সংলাপকে ব্যর্থ বলতে রাজি নন। সংলাপ ব্যর্থ হলে আন্দোলনের মাধ্যমে সাত দফা আদায়ের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। বল এখন সরকারের কোর্টে। সংলাপে ১১ সদস্যের নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে উপদেষ্টাদের নামের তালিকা দেওয়া হয়। তবে নামের তালিকা প্রকাশ করেননি তারা।

ড. কামাল জানিয়েছেন, ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ঐক্যফ্রন্টের মূল দাবি, তফসিল পেছানো, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবির বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

গত ১ নভেম্বর প্রথম দফার সংলাপ শেষে অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকালের সংলাপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সন্তোষ-অসন্তোষের কথা এখনই বলছি না। জনগণের কাছে যাচ্ছি।’ তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘সংলাপে সমঝোতা না হলে আন্দোলনে সাত দফা আদায় করা হবে।’

আজ সন্ধ্যায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি। সংলাপে সমঝোতার লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ঐক্যফ্রন্ট। মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার বলেছে, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে এই আলোচনার সম্পর্ক নেই। প্রয়োজনে পুনঃতফসিল করা যেতে পারে।

দাবি না মেনে তফসিল ঘোষণা করা হলে পদযাত্রা করে ইসি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। মির্জা ফখরুল বলেন, তফসিল ঘোষণা হলে তারা এ কর্মসূচিতে যাবেন। একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্যই তারা তফসিল পেছানোর দাবি করছেন।

বিএনপি মহাসচিব জানান, দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে শুক্রবার রাজশাহীতে জনসভা করবেন তারা। দেশ আন্দোলন-সংঘাতের দিকে যাচ্ছে কি-না- এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকার যদি সে পথে না আসে, তাহলে তার দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কারামুক্তি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। তিনি আইনগতভাবেই জামিনে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তারা তফসিল ঘোষণা করতে মানা করেছেন। এরপরও যদি নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে, তাহলে তারা তা পছন্দ করবেন না। নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১ নভেম্বর দুই জোটের প্রথম দফা সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির বেশিরভাগই ‘সংবিধানসম্মত নয়’ দাবি করে নাকচ করেছিল সরকার পক্ষ। প্রথম সংলাপে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসতে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গায়েবি মামলার তালিকা দিলে তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রধান দাবিগুলো সংবিধানবহির্ভূত বলে বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এ পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট আবারও ‘সংক্ষিপ্ত পরিসরে’ আলোচনার আগ্রহ দেখালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফার সংলাপে ডেকেছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী এই জোট নেতাদের।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ