পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, হত্যা এবং গুজব ছড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর ঘটনায় পুলিশ এরই মধ্যে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এসব অভিযোগে ইতিমধ্যে তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন।
রাতে তিনি বলেন, এর মধ্যে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান হত্যা মামলার বাদী হয়েছেন ওসমান গনী। বাকি দুটি মামলার বাদী পুলিশ।
শুক্র থেকে রোববার তিন দিনব্যাপী আহমদিয়া সম্প্রদায়সালানা জলসার আয়োজন করে। এই জলসা বন্ধ ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে পঞ্চগড় শহরে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিক্ষুব্ধরা।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরে বড় মিছিল হয়। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এ সময় শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে দুজনকে আহমদিয়ারা গলা কেটে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা এমন গুজব ছড়ায়।দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নিজেরা লাশ দেখে এসেছেন জানিয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করে তোলে। এ নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট এবং একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।
Untitled-1
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পঞ্চগড় শহরের রাজনগর মহল্লার নুর আজাদের ছেলে ইসমাইল হোসেন ঝানু (২৫) এবং তুলারডাঙ্গা মহল্লার মো. আফছারের ছেলে মো. রাসেলকে (২৮) সরাসরি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা জানিয়ে আরও বলেন, এ ছাড়া গুজব ছড়ানোর মামলায় শহরের রাজনগর মহল্লার সোলায়মান আলীর ছেলে পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী (৩০) এবং তেঁতুলিয়ার সাতমোড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে রাব্বী ইমনকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। রাতে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এতে মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু অনেকগুলো ঘটনাস্থল, তাই যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’
‘গুজব ছাড়ানো মামলা যুবদল নেতা ফজলে রাব্বি এবং আরেকজনকে প্রযুক্তির সহায়তায় তেঁতুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত নূর ইসলাম নামে আরেকজনকে খুঁজছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ফজলে রাব্বি এবং নূর ইসলাম মোটরসাইকেলে করে দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে-এমন গুজব ছড়িয়েছেন।’
‘হত্যা মামলায় যে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।’
জেলা পুলিশের প্রধান আরও বলেন, ‘শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবের টহল রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেবে না।’