বিশ্বের অনুন্নত ৪৬টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। কাতারের রাজধানী দোহায় জাতিসংঘের লিস্ট ডেভেলপ কান্ট্রিজ (এলডিসি) সম্মেলনে প্রকাশ করা এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। তালিকায় অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে ৩৩টিই আফ্রিকা মহাদেশের। ৯টি দেশ এশিয়া মহাদেশের এবং বাকি ৪টি ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। এশিয়া মহাদেশের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে আছে আফগানিস্তান, তারপরেই আছে বাংলাদেশের নাম।-জিও টিভি
আফ্রিকার দেশগুলো হলো— অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদ, কোমোরোস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব (ডিআর) কঙ্গো, জিবুতি, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি-বিসাউ, লেসোথো, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, নাইজার, রুয়ান্ডা, সাও তোম অ্যান্ড প্রিন্সিপি, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তানজানিয়া, টোগো, উগান্ডা ও জাম্বিয়া।
আর এশিয়ার যেসব দেশ জাতিসংঘের অনুন্নত দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে, সেগুলো হলো— আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাও পিপল’স ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (লাওস), মিয়ানমার, নেপাল, পূর্ব তিমুর এবং ইয়েমেন। এছাড়া ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ হাইতি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চরের দ্বীপদেশ কিরিবাতি, সলোমন ও টুভ্যালুও আছে জাতিসংঘের সর্বশেষ অনুন্নত দেশের তালিকায়।
অনুন্নত দেশ বলতে যাদের বোঝায়
সাধারণভাবে বলতে গেলে— যেসব দেশের অর্থনীতি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় সূচক নিম্নে অবস্থান করছে সেগুলোই অনুন্নত দেশ। তবে জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৮ ডলারের নিচে— সেগুলো অনুন্নত দেশ। অনুন্নত দেশগুলোর জনগণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অভাবে ভোগেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার নিম্ন থাকে, ফলে শিক্ষিত জনসমষ্টির হারও থাকে কম। এছাড়া অধিকাংশ অনুন্নত দেশ অর্থনীতি ভঙ্গুর এবং পরিবেশগত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে এ দেশগুলো। প্রতি ১০ বছর পর পর জাতিসংঘের এলডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে অনুন্নত দেশের তালিকা গৃহীত হয়, তা আবার তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করে জাতিসংঘ। এবারের এলডিসি সম্মেলনের আয়োজক দেশ কাতার। ৫ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত রাজধানী চলবে এই সম্মেলনে।
অনুন্নত দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ
৫ মার্চ জাতিসংঘের কাতার সম্মেলন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুন্নত এই দেশগুলোর সম্মিলিত মোট জনসংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি, অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বসবাস এই ৪৬টি দেশে। কিন্তু এসব দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই দারিদ্র্যে অথবা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির ধাক্কা, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে এসব দেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক অবস্থা সবসময়েই টালমাটাল থাকে। বৈশ্বিক জলবায়ুবিদদের মতে, এই শতাব্দির শেষের দিকে বিশ্বের তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যদি তাদের এই আশঙ্কা সত্যি হয়— সেক্ষেত্রে সীমাহীন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বিশ্বের অনুন্নত ব্লক।
জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনুন্নত বিশ্বের এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই অর্থ সহায়তা ছাড়ে বরাবরই গড়িমসি করছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। উন্নত বিশ্বকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে রোববার এক টুইটবার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অনুন্নত দেশগুলো মাত্র ৪ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের জন্য দায়ী, উন্নত বিশ্বকে অবশ্যই এই দেশগুলোর প্রতি সুবিচার করতে হবে এবং প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’