৭১২ কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাট

৭১২ কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাট

৭১২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে মানববর্জ্যরে জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ‘ট্রিটমেন্ট’ করার জন্য প্ল্যান্টের জায়গাও ঠিক করা হয়নি। প্রকল্পভুক্ত এলাকার পাঁচ পৌরসভায় ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু একটিও হয়নি। কবে হবে, কেউ বলতে পারছেন না। এ ছাড়া ১৩টি পৌরসভায় ১৩টি গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো প্ল্যান্ট বসানো হয়নি। আবার পুরনো ড্রেন সংস্কার করে নতুন বলে চালিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মেয়রদের বক্তব্য হলো, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্পের কাজের তদারকির অভাব এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।

প্রকল্পের প্রাথমিক বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৭১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর আরেক দফা সময় বাড়িয়ে সংশোধিত আকারে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বারবার সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। নতুন করে সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেবেন প্রকল্প পরিচালক।

২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ছিল ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি ছিল ৩০ শতাংশ। অথচ ওই সময় অর্থ ব্যয় হয় প্রায় ৬৫ শতাংশ।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পাইপলাইন ও পাম্প হাউস নির্মাণ হলেও তা তিন বছরেও চালু হয়নি। এমনকি পাইপলাইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না করেই বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় ১৩ কোটি টাকার ড্রেনের নির্মাণকাজও মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে আট কিলোমিটার এলাকায় আরসিসি ড্রেন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের মে মাসে। এক বছরে সেই ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও ২ বছরে কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ।

গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশী মো. আলমগীর  বলেন, কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষে হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে।

প্রকল্পের আওতায় ৩২টি পৌরসভায় ১৬৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও, বরাদ্দ অনুযায়ী কোনো পৌরসভায় ড্রেন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩২টি পৌরসভায় একটি করে মানববর্জ্য ও কঠিনবর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্ল্যান্ট নির্মাণ করার কথা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে একটি প্ল্যান্টেরও কাজ শেষ হয়নি। নানা জটিলতায় অনেক জায়গায় কাজই বন্ধ হয়ে গেছে।

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকূপ পাম্প হাউসসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি বসাতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আজও সেই কাজ শেষ হয়নি। পাইপলাইন বসানোর কাজে সবচেয়ে পিছিয়ে দাগনভূঁইঞা ও সোনাগাজী পৌরসভা।

প্রকল্প এলাকায় কোথাও কোথাও পাইপলাইন বসানো হলেও পানির উৎস নিশ্চিত হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পাইপলাইনের কাজে লাভ বেশি থাকায় তা আগে করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। যদিও বিল তুলে নেওয়া হয়েছে ১৬ কিলোমিটারের। এ ঘটনায় সেখানে অভিযান চালিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ফেনীর দাগনভূঁইয়া পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান  বলেন, ‘শুধু পাইপলাইন বসিয়েছে; কিন্তু পানি আসবে কোথা থেকে, সেটি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আবার মানববর্জ্যরে জন্য ট্রিটমেন্ট করার জায়গা ছিল না। আমি নিজে জায়গা কিনে দিয়েছি; কিন্তু এখনো কাজ হয়নি।’

প্রকল্পের বিষয়ে জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলাম মিয়াকে কয়েকবার মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।

প্রকল্পের আওতায় যেসব পৌরসভা রয়েছে- বেতাগী, বাউফল, কসবা, ফরিদগঞ্জ, মীরসরাই, সাতকানিয়া, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, সোনাগাজী, দাগনভূঁইয়া, সোনাইমুড়ী, হাকিমপুর, নাগেশ্বরী, সুন্দরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, আড়ানী, নগরকান্দা, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, মকসুদপুর, দেওয়ানগঞ্জ, করিমগঞ্জ, কুলিয়ারচর, সিঙ্গাইর, গফরগাঁও, সোনারগাঁও, রায়পুরা, নকলা, কালিহাতী, শ্রীবর্দী, চালনা ও খোকসা।সূত্র :আমাদের সময়

সারাদেশ