নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মে থেকে জুনের মধ্যে তিন ধাপে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এপ্রিলের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করে প্রথম ধাপে ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তফসিল দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ১০ জুন দুই সিটিতে এবং মের শুরুতে তফসিল দিয়ে তৃতীয় ধাপে ২২ জুন অন্য দুই সিটিতে ভোটের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে খুলনা, বরিশাল অথবা খুলনা, রাজশাহী; তৃতীয় ধাপে রাজশাহী, সিলেট অথবা বরিশাল, সিলেট সিটিতে ভোট হতে পারে। তবে তফসিলের আগে সিদ্ধান্ত হবে কোন ধাপে কোন সিটিতে ভোট হবে। মে থেকে জুনের মধ্যে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশন সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভা শেষে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘মে থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোনটা কখন হবে তখন জানাব। এইচএসসি পরীক্ষা হবে সম্ভাব্য ৭ জুলাই থেকে। সেজন্য এসএসসি পরীক্ষা শেষে ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যবর্তী সময়ের তিন ধাপে পাঁচ সিটির ভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ তারিখ নির্ধারণের কারণ রমজান শেষে যে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তা চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। আর ২৯ জুলাই হচ্ছে ঈদুল আজহা। সচিব বলেন, নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। ভোট কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাও রাখতে চায় কমিশন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তফসিলের আগে।
কমিশন সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্ত : সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও রিটার্নিং অফিসার করা হতে পারে। ইসি সচিব জানান, ‘রোডম্যাপের আলোকে’ কোন কাজে কতটুকু অগ্রগতি, তা কমিশনকে জানানো হয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনী সীমানার খসড়া প্রকাশ, পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১ লাখ ১০ হাজার মেশিনকে মেরামত করে আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারব। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে (ইভিএম ও আসনে) তা চূড়ান্ত করতে পারব। কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
অর্থ ছাড়ে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান সচিব। বলেন, যদি সম্মতি দেয় তাহলে পরবর্তী ধাপে আমরা জানাতে পারব আসলে কোন কোন আসনে কতটি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে পারব। সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি আসনে সম্ভব কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে।
দুবাইপ্রবাসীদের এনআইডি ঈদের পর : সচিব জানান, ঈদুল ফিতরের পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি দল পাঠিয়ে প্রবাসীদের এনআইডি সেবার বিষয়ে পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। ভোটাররা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে এসে আবেদন করবেন। সেই আবেদন স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই ও তদন্ত হবে। পরে দূতাবাসে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও অন্যান্য তথ্য নেওয়া হবে। এরপর নির্বাচন কমিশন স্মার্টকার্ড তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হবে। সেখান থেকে এনআইডি নিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এখন পর্যন্ত ছয় দেশ থেকে ৫ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার পর তাদের স্থানীয় ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার আবেদনের তদন্ত বাকি রয়েছে; প্রায় ৩০০ আবেদন অনুমোদন পেয়েছে আর ২০০ আবেদন বাতিল হয়েছে। মহামারির মধ্যে এনআইডি দেওয়ার কাজটি আর এগোয়নি। যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, দেশে স্থানীয়ভাবে কয়েক শ আবেদনের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করা হলেও এনআইডি দেওয়া যায়নি।