সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবিতে আন্দোলন জোরদারে তৎপর বিএনপি। এজন্য রমজানজুড়ে মাঠে থাকছে দলটি। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭টি মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে নানা খাতে সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মসহ দাবিগুলো তুলে ধরা হবে। এছাড়াও ৮২ সাংগঠনিক জেলা, ৬ শতাধিক থানা-উপজেলায় অবস্থান, মানববন্ধন ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে। তৃণমূলের এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিমও করা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে পহেলা এপ্রিল থেকে সারা দেশের সাংগঠনিক সব মহানগর ও জেলা, সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা এবং ইউনিয়নে ৯ দিনব্যাপী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে মতবিনিময় ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। এর পাশাপাশি ঢাকা মহানগরেরও ৫০ সাংগঠনিক থানায় পৃথকভাবে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। সূত্রমতে, রমজানজুড়ে এসব কর্মসূচি দেওয়ার মূল কারণ নেতাকর্মীদের চাঙা রাখা। নানা খাতে সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মসহ দশ দফা সংবলিত একটি ‘বুকলেট’ তৈরি করা হচ্ছে। যা সারা দেশে গণসংযোগকালে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিতরণ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা যাতে কর্মসূচি পালন করে একসঙ্গে ইফতার করতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। অথাৎ কর্মসূচি পালন ও ইফতার একসঙ্গেই আয়োজন করবে দলটির তৃণমূল। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘রমজান মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু আজকে দেশের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে আমরা বাধ্য হয়েছি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সর্বোপরি এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন তা এ রমজানেও চলমান রাখতে চাই। সেজন্য আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। আশা করব এই কর্মসূচিগুলোতে দেশে আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করবেন।’
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদল ৩৭টি মতবিনিময় সভা করবে। তাছাড়া জেলা বিএনপি যদি নিজস্ব উদ্যোগে মতবিনিময় সভা করতে চায়, তা করবে। যেসব জেলায় এ সভা হবে সেখানে বিএনপির জাতীয় নেতারা, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন। জেলাগুলোর যে ভেন্যুতে সভা হবে সেখানে সংশ্লিষ্ট জেলা বিএনপির নেতারা ও অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারাও থাকবেন।
এছাড়া ৮২ সাংগঠনিক জেলার কর্মসূচিতেও (১ এপ্রিল সব মহানগর ও জেলায় দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান) কেন্দ্রীয় নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। ৮ এপ্রিল সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। থানা-উপজেলার কর্মসূচি সফলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হচ্ছে।’
৩৭টি মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা : বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মতবিনিময় সভা। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭টি সভা হবে। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আলাদা সভা করে। লেডিস ক্লাবে কৃষক দলের সভায় ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ময়মনসিংহ উত্তর, দক্ষিণ জেলা ও ময়মনসিংহ মহানগরের সভায় নজরুল ইসলাম খান; ৩১ মার্চ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভায় আমান উল্লাহ আমান ও যুবদল বরিশাল জেলার উদ্যোগে সভায় অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল; ২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভায় আব্দুস সালাম; ৩ এপ্রিল কৃষক দল পাবনা জেলা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উদ্যোগে সভায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ছাত্রদল ময়মনসিংহ জেলা, ঢাকা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের উদ্যোগে সভায় হাবিব উন নবী খান সোহেল ও রকিবুল ইসলাম বকুল। ৪ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী কৃষক দল সুনামগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সভায় এজেডএম জাহিদ হোসেন ও যুবদল কুমিল্লা জেলার উদ্যোগে বরকতউল্লা বুলু। ৫ এপ্রিল ছাত্রদল বগুড়া জেলা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উদ্যোগে সভায় আমান উল্লাহ আমান ও স্বেচ্ছাসেবক দল বরিশাল জেলা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উদ্যোগে সভায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ৬ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ওয়ারী থানার উদ্যোগে সভায় আবদুস সালাম ও যুবদল ফরিদপুর জেলার উদ্যোগে সভায় শামসুজ্জামান দুদু।
৭ এপ্রিল যুবদল মৌলভীবাজার জেলার উদ্যোগে সভায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও কৃষক দল চট্টগ্রাম জেলা ও কুমিল্লা বিভাগের উদ্যোগে সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; ৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বাড্ডা থানান উদ্যোগে সভায় আমান উল্লাহ আমান ও স্বেচ্ছাসেবক দল খাগড়াছড়ি জেলা ও কুমিল্লা বিভাগের উদ্যোগে সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; ৯ এপ্রিল যুবদল রংপুর জেলার উদ্যোগে সভায় ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ১০ এপ্রিল যুবদল কিশোরগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সভায় নজরুল ইসলাম খান এবং কৃষক দল ঝিনাইদহ জেলা ও বরিশাল বিভাগের উদ্যোগে সভায় শামসুজ্জামান দুদু; ১১ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবক দল সিলেট জেলার উদ্যোগে সভায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও যুবদল রাজশাহী জেলার উদ্যোগে সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ১২ এপ্রিল ছাত্রদল যশোর জেলার উদ্যোগে সভায় শামসুজ্জামান দুদু, ১৩ এপ্রিল ছাত্রদল বরিশাল জেলার উদ্যোগে সভায় জহির উদ্দিন স্বপন ও যুবদল খুলনা জেলার উদ্যোগে সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ১৪ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবক দল ঠাকুরগাঁও জেলা ও রংপুর বিভাগের সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং যুবদল নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সভায় অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন; ১৫ এপ্রিল যুবদল চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও কৃষক দল ফরিদপুর জেলার উদ্যোগে আবদুস সালাম। ১৬ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবক দল মানিকগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সভায় হাবিব উন নবী খান সোহেল ও ছাত্রদল কক্সবাজার জেলার উদ্যোগে সভায় শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি; ১৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় যুবদলের উদ্যোগে সভায় মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কদমতলী থানার উদ্যোগে সভায় আবদুস সালাম, ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শাহজাহানপুর থানার উদ্যোগে সভায় আবদুস সালাম ও ছাত্রদল সিলেট জেলার সভায় ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এ মতবিনিময় আয়োজনও দলের একটি নতুন কৌশল। বিকালে এসব সভা হবে। সভা শেষে ইফতারের আয়োজন থাকবে। অর্থাৎ ব্যানারে মতবিনিময় সভা ও ইফতার পার্টি লেখা থাকবে।