জেলেদের একটি দল প্রতিদিনের মতো মাছ শিকারের জন্য ইঞ্জিনচলিত একটি নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়। তবে নৌকাটির ইঞ্জিন হঠাৎ বিকল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তারা। অনেক চেষ্টার পর ইঞ্জিনটি কোনভাবেই সচল করতে না পারায় তাদের নৌকাটি সাগরে ভাসতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সাহয্য পেতে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তারা। এভাবে পাঁচ দিন সাগরে ভেসে থাকার পর একজন জেলের ফোন হঠাৎ নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করেন।
তিনি শুধু এটুকু বলতে পারেন, ‘পাথরঘাটা থেকে বঙ্গোপসাগরে পূর্ব দিকে ১৮ ঘণ্টা যাত্রা করার পর তাদের নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে’। তবে কলার তাদের কোন অবস্থান জানাতে পারেননি।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের এ ঘটনায় সমুদ্রে আটকে পড়া ওই ১৩ জেলেকে উদ্ধার করতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল। তখন কোস্টগার্ডের একটি দল হাতিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে খোঁজাখুঁজির পর নিঝুম দ্বীপের কাছ থেকে তাদের উদ্ধার করে। মূলত ৯৯৯ এর স্বয়ংক্রিয় কলার শনাক্তকরণ এবং লোকেশন সার্ভিস না থাকায় জেলেদের উদ্ধার করতে এতো সময় লেগেছিল।
তবে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি এই সমস্যার সমাধান পেয়েছে। তারা সম্প্রতি কলারের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্তকরণের প্রযুক্তি ব্যাবহার শুরু করেছে। ফলে এখন যে কোনো পরিস্থিতিতে আরও দ্রুত সাড়া দিতে সক্ষম হবে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর পুলিশ পরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) আনোয়ার সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, কলারের অবস্থান জানতে না পারায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই্ আমারা সেবা ভালোভাবে দিতে পারিনি। অনেক জরুরি পরিস্থিতেও বেশ চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে। তবে সম্প্রতি কলারের লোকেশন শনাক্ত করণে জন্য যেসব প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল তা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রমে এই প্রযুক্তিটা নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এখনও পুরোপুরি ব্যাবহার উপযোগী হয়নি। আরও কিছুদিন পর থেকে কলারদের দ্রুত সাড়া দিতে পারবো আমরা। ফলে যেকোন পরিস্থিতে কলারকে সেবা আমাদের রেসপন্স টাইম আরও কমে আসবে।
জানা গেছে, একটি কল পাওয়ার পর হেল্পলাইন ইউনিটের কর্মীরা সাহায্যপ্রার্থীদের পরিচয়, অবস্থান এবং কলের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। এরপর পুলিশ বা ফায়ার স্টেশন কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে কনফারেন্স কলের ব্যবস্থা করে তাদের সহায়তা প্রার্থীদের ব্রিফ করেন। এরপর ডিউটি অফিসার পুলিশ টহল দল বা ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্সকে কলারের অবস্থানের কাছের কাছে সাহায্যের জন্য যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে কলারের কাছে যেতে গড়ে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাপানের মতো দেশে প্রায় সাত মিনিটেই হয়। বাংলাদেশে এই রেসপন্স টাইম কমিয়ে আনতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে ছিল স্বয়ংক্রিয় অবস্থান শনাক্তকরণ সিস্টেম। এখন এই স্বয়ংক্রিয় অবস্থান শনাক্তকরণ সিস্টেম পুরোপুরি চালু হলে কলারের কাছে যেতে সময় আর কম লাগবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে ৯৯৯ এ সরাসরি সমাধান যোগ্য কলের মধ্যে পুলিশ সার্ভিস দেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫টি, ফায়ার সার্ভিস এক লাখ ২৭ হাজার ১৭১টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি। তারা বর্তমানে একসঙ্গে ৮০টি কল রিসিভ করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কল আসছে। এর মধ্যে সার্ভিসযোগ্য কল আসছে ৪১ শতাংশ। ৯৯৯ এ একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৪৩০ জন কর্মী কাজ করছেন।
এছাড়া আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশি আস্থা অর্জন করায় কলারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দেশের জনসংখ্যা ও কলের পরিমাণ বিবেচনায় কর্মকর্তারা বলছে, জনবল বাড়ানো হলে সেবা আরও দ্রুত দেওয়া সম্ভব।