২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ ও কিছু সুযোগের বিষয় তুলে ধরে বাংলাদেশ নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অর্থনৈতিক চাপ সামলানোটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ দুটিসহ আরো কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করবে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে জানানো হয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয়গুলো ২০২২ সালে তাদের উন্নয়ন ও মানবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন তৈরির বেলায় জাতিসংঘের ১৬টি আবাসিক ও আটটি অনাবাসিক কার্যালয় কাজ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা আকর্ষণের প্রতিযোগিতা, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকটের মধ্যেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করার উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ। আর এগুলোই বাংলাদেশের ২০২৩ সালের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও বিশেষ চ্যালেঞ্জিং।
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের দিকে যাচ্ছে। সরকার ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে জাতিসংঘও উত্তরণের কৌশল নির্ধারণে কাজ করবে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে একত্রীকরণ এবং তাদের কাছে যাতে উন্নয়নের ফসল পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা মাথায় রেখে কৌশল নির্ধারণ করা হবে। সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক জাতিসংঘের দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিবেশের ক্ষতি কমানোর পাশাপাশি শ্রমমান ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতিসংঘ উন্নয়ন অংশীদার ও বেসরকারি খাতের সহায়তা নেবে, যাতে বাজারগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা বজায় থাকে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় সংকট মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহও করতে হবে। তাই বছরজুড়ে জীবিকা সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়াটা জাতিসংঘের প্রধান অগ্রাধিকার। অন্যদিকে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা সংকট আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ায় খাদ্য সহায়তা ১৭ শতাংশ কমেছে। সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ৮০০ আশ্রয় ধ্বংস হয়েছে। তাই পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনে সহায়তা নিশ্চিত করাও অন্যতম অগ্রাধিকার। মিয়ানমারে নিরাপদে, সম্মানের সঙ্গে এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনও জাতিসংঘের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন অঞ্চলে যুদ্ধের প্রভাব ও করোনা মহামারির কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে স্তিমিত করেছে। ২০২২ সালে সিলেটে ও সুনামগঞ্জের ৭২ লাখ মানুষ ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭২ কোটি ডলারের বেশি। এ জন্য জাতিসংঘের জরুরি সহায়তা তহবিল থেকে ৫০ লাখ ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে পাওয়া গেছে ২ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা।
এদিকে, প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এক বিবৃতিতে বলেন, ২০২২ সালের চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক পরিবেশ সত্ত্বেও জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার জন্য নীতিমালা জোরদার করার পাশাপাশি কতগুলো ধারাবাহিক উদ্যোগ ও সেবা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য সহায়তা, নিরাপদ, বৈধ ও নিয়মিত অভিবাসন, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রগুলো জোরদার করার প্রয়াসও অব্যাহত রয়েছে।