ঈদ মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

ঈদ মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

ঈদের মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকায় শেষ সময়ের আগেই কেনাকাটা সেরে রাজধানী ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নগরবাসী। সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ অফিস-প্রতিষ্ঠানে বেতন বোনাস প্রদান করায় ঈদ বাজারে কেনাকাটার ধুম লেগেছে। পরিবার-পরিজন ছাড়াও নিকটাত্মীয়দের পোশাক কিনতে শপিংমলে ছুটছে মানুষ। তাই ঈদ বাজারে যেন সুঁই ফেলার মতো জায়গা নেই। গরমের মধ্যে ভিড় ঠেলে দ্রুত পছন্দের পোশাক ক্রয়ের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে মানুষ। রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট, শপিংমল এবং ফুটপাতে ব্যাপক লোকসমাগম দেখা গেছে। এমনকি মার্কেটের সামনের রাস্তায় অনেক মানুষের আগমনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

নগরীর মৌচাক, শান্তিনগর, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও মিরপুর রোডে শপিংমলমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার সরেজমিনে ধানমন্ডির-২৭ নম্বরের আড়ং মোড় থেকে পুরো মিরপুর রোডের আশেপাশের মার্কেটগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ায় বিক্রির পালেও জোর হাওয়া লেগেছে। ধানমন্ডি আড়ং-এর শোরুমে গিয়ে দেখা যায় বাইরে থেকেই ভিড় লেগে আছে। গাড়ি পার্কিং করতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভেতরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাহারি ডিজাইনের থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শাড়ি, ব্যাগ, জুতা, চাদর, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র সবই পাওয়া যাচ্ছে। কাউন্টারে বিল দিতে বিশাল সিরিয়াল দেখা যায়। পরিবারের সদস্য আর শিশুদের উপস্থিতিতে পুরো ঈদের আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছিল। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ। কার আগে কে পছন্দের কাপড় বাছাই করতে পারবে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। তবে বিক্রির সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এ শাখার দায়িত্বে থাকা সজিব দেবনাথ। কথা বলতে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি লাগবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

পাশেই আরেক মার্কেট আয়েশা শাড়ি বাজার। এখানে মিরপুর ও টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন শাড়িতে অফারের বিষয়টি সাউন্ডবক্স দিয়ে বাজানো হচ্ছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। তাদের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ মিলছে না। আরেকটু এগোলেই চোখে পড়ে সানরাইজ প্লাজা। এখানে বিভিন্ন পোশাকের পাশাপাশি শাড়ির কালেকশনই বেশি। বি প্লাস নামে একটি শোরুমে মানুষের উপস্থিতি ভালোই দেখা গেছে। ব্যস্ততার মধ্যেই এক ফাঁকে কথা হয় ম্যানেজারের সঙ্গে। বিক্রি ভালো জানালেন তিনি। ১১শ’ থেকে ২৪শ’ টাকার মধ্যে শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে এ দোকানে।

একই মার্কেটে ভারতীয় তাঁত ও সিল্কের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে তাঁত ঘর নামের একটি দোকানে। ৩ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকার শাড়িও আছে এ দোকানে। তবে ৩-৫ হাজার টাকা দামের শাড়িগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা। দোকানে মানুষ বেশি থাকায় বেশিক্ষণ কথা বলারও সুযোগ হয়নি।

পাশেই রয়েছে রাপা প্লাজা। দীর্ঘদিন ধরেই এ মার্কেটের খ্যাতি রয়েছে ধানমন্ডি এলাকায়। রঙিন লাইট আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে মার্কেটটি। জ্যোতি ফ্যাশনে মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে ভালোই। বিক্রয়কর্মীরা সবাই ব্যস্ত। একই অবস্থা পাশের নীল আঁচল শাড়িজ নামের আরেকটি দোকানের। ভিড় বেশি থাকায় বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে কথা বলার সুযোগই নেই।

এদিকে ২৭-সাপ্তাক স্কয়ারে রয়েছে অভিজাত সব দেশী- বিদেশী ব্র্যান্ডের শোরুম। রেভেবিডি নামের একটি দোকানে অভিজাত ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। পার্শ¦বর্তী অর্কিড প্লাজায় গিয়েও ক্রেতাদের পদচারণার দেখা মিলেছে। এসব এলাকায় অবশ্য অভিজাত ক্রেতাদের আগমন বেশি। তাই মার্কেটের সামনে গাড়ির ভিড় দেখা গেছে। পাশের প্লাজা এআর এবং মেট্রো শপিংমল ঘুরেও ক্রেতাদের সমাগম দেখা যায়। আর বেচাবিক্রির মধ্যে ধানমন্ডি এলাকায় ছুটির দিনেও জ্যাম লেগে যায়। বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে দুদিক থেকে দুপুরে তীব্র জ্যাম দেখা যায়।

অন্যদিকে পবিত্র জুমার নামাজের পর থেকে নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড ও হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল দোকানের ভেতরে কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। তবে ইফতারের পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দোকান মালিকরা। নিউমার্কেট এলাকায় জুমার নামাজের পর থেকেই জ্যাম লেগে যায়। ছুটির দিন থাকায় শুক্রবারেই বেশি বিক্রির আশা করছেন এখানকার বিক্রেতারা। এখন থেকে প্রতিদিন ভিড় বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

রাজধানীর গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম এলাকাতেও একই ধরনের ভিড় লেগেছে। শান্তিনগর ও বেইলি রোডেও জমে উঠেছে ঈদ বাজার। মৌচাক মার্কেট আর ফরচুন শপিং মলেও অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে লোকসংখ্যা বেশি ছিল এদিন।

উল্লেখ্য, ঈদের শেষ সময়ে এসে মার্কেটে ভিড় বাড়ে আর বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে। তাই বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ কেনাকাটা সারতে ভিড় করছেন শপিংমলগুলোতে। সামনে পোশাক কারখানার বেতনও দেওয়া শুরু হচ্ছে। সুতরাং চাঁদরাত পর্যন্ত শপিংয়ের এ আমেজ বজায় থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা।

জাতীয়