নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরনো বছর শেষে নতুন বছরটি সুখে, শান্তিতে, সমৃদ্ধি ও উন্নতিতে কাটুক- নববর্ষে এমনটিই সবার প্রত্যাশা। পুরনো জরাজীর্ণতা, গ্লানি ও ব্যর্থতা পেছনে ফেলে হতাশা ভুলে নতুন বছরটি আসুক সফলতার বার্তা নিয়ে- এমন প্রত্যাশায় আজ শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। বিদায়ী ১৪২৯-এর সব ব্যর্থতা ভুলে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত প্রত্যয়ের আজ প্রথম দিন। আজ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪৩০-এর প্রথম দিন। ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ কবিগুরু এভাবেই পুরনো গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সব না পাওয়া, ব্যর্থতা, ব্যথা-বেদনা ও হাহাকারকে বিদায় জানিয়ে সাফল্য ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। পাওয়া-না পাওয়া জীবনের হালখাতার সব হিসাব চুকে দিয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ বাংলা নববর্ষে নতুনভাবে এগিয়ে যাবে বাঙালি। বিদায়ি বছরের সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে জাতি আজ উদ্দীপ্ত হবে নতুন শপথে। রবিঠাকুরের অমিয় সুরের মূর্ছনা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানটির মধ্য দিয়ে আজ দেশব্যাপী বৈশাখকে স্বাগত জানাবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ আজ মেতে উঠবে বৈশাখী ভালোলাগায়। পান্তা-ইলিশ, মুড়িমুড়কি, বাতাসা আর মন্ডামিঠাই দিয়ে জাতি আজ উদযাপন করবে নতুন বছর। তবে রমজানের কারণে সব আয়োজনের ব্যাপ্তিই থাকবে সীমিত পরিসরে। বৈশাখ উদযাপনে নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ছায়ানট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা : দেশবাসীসহ সব বাঙালিকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন। আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে জানাই বাংলা নবর্ষের শুভেচ্ছা। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ। নতুনের বার্তা নিয়ে বেজে ওঠে বৈশাখের আগমনি বার্তা। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতা ভুলে সবাই জেগে ওঠে মহানন্দে। সময়ের পরিক্রমায় বৈশাখ আজ সমগ্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সুখী, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব অন্ধকার ও বাধাবিপত্তি দূর করে আগামী বছরে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধাবিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’ বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নানা ধরনের বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দেশ আরও একটি বছর পার করেছে। দেশ-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুভ নববর্ষ’।
ছায়ানট : ‘দূর কর অতীতের সকল আবর্জনা, ধর নির্ভয় গান’ শিরোনামে আজ পয়লা বৈশাখ রমনা বটমূলে বঙ্গাব্দ ১৪৩০ বরণ করছে ছায়ানট। ভোরের আলো ফুটতেই আহির ভৈরবের সুরে, ছন্দের বন্ধনে রমনার বটমূলে শুরু হবে বাংলা নববর্ষবরণের এবারের আয়োজন। নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে সাজানো থাকবে এবারের অনুষ্ঠানমালা। প্রায় দেড় শ শিল্পী থাকছেন এবারের আয়োজনের পরিবেশনায়। এ আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণপূর্ত অধিদফতর। রমনা উদ্যানের দুই ঘণ্টাব্যাপী এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।
চারুকলা অনুষদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে বরাবরের মতো এবারও থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রাটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও টিএসসি ঘুরে চারুকলা অনুষদে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। শোভাযাত্রা সফল করতে সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা চেয়েছে চারুকলা অনুষদ।
বাংলা একাডেমি : আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ বরণ করবে বাংলা একাডেমি। সকাল ৮টায় একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে নববর্ষ উদযাপনের এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সচিব কবি আসাদুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। নববর্ষ বক্তৃতা ১৪৩০ প্রদান করবেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহীর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল। অনুষ্ঠানের শুরুতে এবং শেষে রয়েছে চিরায়ত এবং সমকালীন বর্ষবরণ সংগীত। বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে বৈশাখী মেলা। মেলা শেষ হবে ২০ এপ্রিল।
শিল্পকলা একাডেমি : নানা আয়োজনে পয়লা বৈশাখ বরণ করছে শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায় আলপনা অঙ্কন কর্মশালার সনদপত্র প্রদান। এরপর সকাল ১০টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নজরুল সংগীত পরিবেশন করবেন সুজিত মোস্তফা। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন লাইসা আহমেদ লিসা। ভাওয়াইয়া গাইবেন পূজা ও পলাশ। বাউল গান পরিবেশন করবেন বিউটি, সন্দীপন, শরীফ সাধু ও পুতুল। দলীয় পরিবেশনায় থাকছে শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দলের সমবেত সংগীত। একাডেমির জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হবে বৈশাখের নৃত্য। এ ছাড়া থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা নৃত্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বৈসাবি নৃত্য, ধামাইল নৃত্য, পুথিপাঠ, যাত্রা এবং আবৃত্তি।
আজ সরকারি ছুটি : আজ সরকারি ছুটির দিন। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক একে পৌরাণিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে আজ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় দৈনিকগুলোয় ক্রোড়পত্র প্রকাশ হবে। বাংলা নববর্ষে দেশের সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে।