মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সরকারের কাজ তৃণমূল পর্যায়ে শুরু হয়ে যায়। কারণ, ৭ মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন যে তাঁর নির্দেশে প্রশাসন পরিচালিত হতে হবে, তখন থেকেই কিন্তু প্রশাসন পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে পরিচালিত হতো না। মোটামুটিভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেসব নির্দেশ দেওয়া হতো, সেগুলোই প্রতিপালন করা হতো।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর একটি বিপুল প্রভাব জনগোষ্ঠীর ওপর পড়ে। আমি হবিগঞ্জে তখন মহকুমা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম। হবিগঞ্জে যখন সেই দায়িত্ব পালন করছিলাম, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য হবিগঞ্জ মহকুমার মধ্যে ছিল না। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিল। কিন্তু তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় এবং তাদের যে কমান্ডার ছিলেন, একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলায়। অন্যদিকে শমশেরনগরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছিল। কিন্তু ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সেখানে পাকিস্তানিদের নিরস্ত্র করেন। তাদের বাধ্য করেন পশ্চাদপসরণে। শুধু সিলেট বিমানবন্দরে কিছু পাকিস্তানি সেনা ছিল, আর কিছু সেনা ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। বাকি অঞ্চল মোটামুটিভাবে মুক্ত ছিল। কাজেই জনগণের প্রত্যাশা ছিল মুক্তাঞ্চলে প্রশাসন চলবে। সে জন্য সরকারি অফিস-আদালত চালু রাখতে হয়েছে এবং সরকারি কর্মচারীরা যেন বেতন পান, ব্যাংকে যেন স্বাভাবিক লেনদেন হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ না হয়, সে জন্য সামগ্রিকভাবে কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু ছিল। ওই সময় আমাদের অনেক আদেশ দিতে হয়েছে, যা স্বাভাবিক পাকিস্তানি আইনে সম্ভব ছিল না। আমার মনে আছে, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের আগে আমি হবিগঞ্জে অনেক আদেশ দিয়েছি, যেগুলোতে আমি লিখতাম, ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে’। কিন্তু বস্তুত তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়নি।বিস্তারিত