আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির যেকোনো আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মূলত বিএনপির আন্দোলনকে আর বাড়তে দেবে না দলটি। দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের যেকোনো সহিংস আন্দোলন মোকাবিলায় নানা পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলটি মাঠ দখলে রাখার রাজনীতির পাশাপাশি নির্বাচনি পরিবেশও তৈরির চেষ্টা করছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করা। কারণ বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে সরকারকে। ফলে রাজপথে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না দলটি। বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর আয়োজনে শান্তি সমাবেশ, মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ অহিংস কর্মসূচি থাকবে একের পর। বিএনপিকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না। একতরফা কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিলে বিএনপি রাজপথে সহিংসতা চালানোর মধ্য দিয়ে মাঠ গরম করে ফেলতে পারে। সে কারণে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলটির পাল্টা কর্মসূচি চলমান থাকবে। তবে দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণাত্মক ভূমিকা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি পালন করা হবে। শিগগিরই সারা দেশে শরিকদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করবে দলটি। তবে বিএনপিকে সমাবেশ করার সুযোগ দিলেও বিশৃঙ্খলা করতে দেবে না প্রশাসন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকবে। তারা সমাবেশের আড়ালে নাশকতা ও সন্ত্রাস ঘটানোর কোনো পরিকল্পনাও যেন না নিতে পারে সে বিষয়ে বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। তারা কোনো ধরনের সহিংসতা করলে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে প্রশাসনকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। কারণ বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বললেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে জন্য তারা কর্মসূচি রাজধানী থেকে মহানগর এবং জেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর উদ্দেশ্য হলো তারা পরিস্থিতি বুঝে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, বিএনপি তাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে, এটা একটা ভালো দিক। কারণ এর মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, তারা নির্বাচনে আসবে। আমরাও আমাদের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা শুধু কর্মসূচিই পালন করছি না। এর মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের নির্বাচনি প্রচারের কাজ চলছে। জনগণ যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, আমাদের আবারও ভোট দেয়, সেসব বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে নির্বাচনের আর মাত্র বাকি ৭ মাস। যদিও বিএনপি নির্বাচনের অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করায় ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকায় নির্বাচনি হাওয়া এখনও শুরু হয়নি। তাই আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার মধ্য দিয়েই নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। যাতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের ওপর পরোক্ষভাবে এবং দলটির নেতাকর্মীদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়।
তবে বিএনপি যে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে এটি আওয়ামী লীগের কাছে পরিষ্কার। তারা সরকার পতনের আন্দোলন করছে না, নির্বাচনি প্রস্তুতির তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থতি তৈরি করলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। প্রশাসন আইনিব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে প্রশাসনকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বিএনপিও নির্বাচনে আসবে। কারণ তারা যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, এর মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনি মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছে। তবে তারা যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না আসে, সেখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। আর তারা কর্মসূচির নামে কোনো অরাজকতা তৈরি করতে চাইলে আওয়ামী লীগ রাজপথেই মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কঠোর হস্তে দমন করবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনে বিশ^াস করে, মানুষ ভোট দিতে চায়, তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দেবে। যদি আগামী নির্বাচন কেউ কোনোভাবে বানচালের চেষ্টা করে, তা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহত করব। দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করব। দেশে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। তারা যদি নির্বাচন বানচালে ২০১৩-১৪ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাসসহ ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ড করে তা হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাদের আর সহিংসতা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে, এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কর্মসূচির নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথেই জবাব দেবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কারণেই আগামী নির্বাচনে আসবে। কারণ বিএনপির অনেকেই রাজনীতিটা করতে চায়। ফলে তারা নির্বাচনেও অংশ নিতে চায়। আর তারা যেসব কর্মসূচি পালন করছে, এর মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হচ্ছে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছে। আর তারা যদি আন্দোলনের নামে দেশে কোনো সহিংসতা করতে চায়, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কারণ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা আইনিব্যবস্থা নেবে। আর আওয়ামী লীগ তো নির্বাচন সামনে রেখে সভা-সমাবেশ করছে। এসব কর্মসূচি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চলমান থাকবে। আওয়ামী লীগের মাঠে সরব উপস্থিতির কারণেই বিএনপির সহিংসতা করার সুযোগ নেই।